Afghanistan

Afghanistan: মেয়েদের আগেই বিক্রি করেছি, এ বার বেচেছি কিডনিও! অন্ন জোটাতে মরিয়া আফগান মা

প্রায় চার বছর আগে ভিটেমাটি ছেড়েছিলেন রহমতি। উঠে এসেছেন হেরাটের বস্তিতে। তবে আট ছেলেমেয়ের মুখে খাবার জোটাতে দিশেহারা অবস্থা রহমতিদের।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
কাবুল শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:১৩

প্রতীকী ছবি।

কোনও মতে মাথা গোঁজার ঠাঁই রয়েছে। তবে তাতে দশ জনের সংসারে অন্ন জোগানোর সংস্থান নেই। কাজকারবার হারানো ভিটেহারা আফগান মা বাধ্য হয়েই বেচে দিয়েছেন নিজের দুই মেয়েকে। তাতেও সমস্যা কমেনি। বেচেছেন নিজের কিডনিও। অস্ত্রোপচারের ক্ষতও শুকিয়ে ওঠেনি। জোগাড় করতে হচ্ছে অসুস্থ দুই ছেলের হাসপাতালের খরচ। স্বামীর জন্য ওষুধ। শীতের দাপটের মাঝেই খরা এবং করোনার প্রকোপে কাজ হারানো পরিবারে আশার আলোও নিভু নিভু।

‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর একটি প্রতিবেদনে বলছে, প্রায় চার বছর আগে আফগানিস্তানের বদগিস প্রদেশের ভিটেমাটি ছেড়েছিলেন দেলরম রহমতি। উঠে এসেছেন হেরাটের বস্তিতে। তবে আট ছেলেমেয়ের মুখে খাবার জোটাতে দিশেহারা অবস্থা রহমতিদের। খিদের জ্বালায় মাস কয়েক আগে নিজের মেয়েদের বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। রহমতির কথায়, “অচেনা লোকেদের হাতে মেয়েদের বেচে দিয়েছি। এক জন আট আর অন্যটার বয়স ছয়।” প্রাপ্তবয়স্ক হলে রহমতির সে মেয়েদের তুলে দিতে হবে ক্রেতাদের হাতে।

Advertisement

এক লক্ষ আফগান মুদ্রায় (ভারতীয় মুদ্রায় সাড়ে ৭০ হাজার টাকা) এক একটি মেয়েকে বিক্রি করে হাতে কিছুটা অর্থ এসেছে বটে। তবে তাতে রহমতির সংসারে সাশ্রয় হয়নি। দুই ছেলের চিকিৎসায় সে অর্থও হু হু করে শেষ! রহমতির এক ছেলে ভুগছে মানসিক অসুস্থতায়। অন্য জন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। স্বামীর জন্য নিয়মিত ওষুধও কিনতে হয়। উপায় না পেয়ে দু’মাস আগে দেড় লক্ষ আফগানিতে নিজের ডান কিডনিও বিক্রি করেছেন রহমতি। ভারতীয় মুদ্রায় যা ১ লক্ষ টাকার কিছু বেশি। তবে সে অস্ত্রোপচারের পর থেকে নিজেও অসুস্থ। কিন্তু, চিকিৎসা করানোর জন্য অর্থ নেই তাঁর হাতে। রহমতি বলেন, “মেয়েদের ভবিষ্যৎ বিক্রি করাটা যন্ত্রণার। তবে ঋণের বোঝা নামাতে আর খিদের জ্বালায় আমার কিডনিও বেচতে বাধ্য হয়েছি।”

তালিবানশাসিত আফগানিস্তানে এ রকম হাজারো রহমতির দেখা মিলবে বলে জানাচ্ছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, “সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে সঙ্কটময় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভগ্নদশার সঙ্গে রয়েছে মানবিক সঙ্কটও।”

২০২১ সালে তালিবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের উপর জারি করা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার জেরে ভঙ্গুর হয়েছে সে দেশের অর্থনীতি। সঙ্গে অতিমারি ও খরার দাপটে কর্মহীন দেশের বহু মানুষ। হু হু করে বেড়েছে মুদ্রাস্ফীতি। বিপাকে পড়েছেন রহমতিরা। নিজেদের কিডনি বিক্রি করাই তাঁদের কাছে অর্থ উপার্জনের অন্যতম পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি রহমতি। তিনি বলেন, “এখনও ঠিক মতো হাঁটতে পারি না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমার ক্ষতের ঘা শুকোয়নি। হাসপাতাল থেকে চলে আসতে হয়েছে। তবে নিজের মরণ ভাল। কিন্তু সন্তানদের খিদের জ্বালায় কাতরাতে দেখতে পারব না!”

আরও পড়ুন
Advertisement