ইজ়রায়েলে হামাস হানা। ছবি: রয়টার্স।
৮ অক্টোবর: যুদ্ধ চলছে। তবে এখানে চারপাশ আজ খুব থমথমে। একটু বেশিই চুপচাপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে রয়েছি। বাইরে থেকে অনেক খবরই কানে আসছে। কিন্তু সাইরেনের শব্দ আজ আর শুনতে পাইনি। বোমার আওয়াজও কানে আসেনি। ভিতরে একটা ভয় কাজ করছে। এ দেশে অনেক ভারতীয়ের বাস। এর মধ্যে বাঙালির সংখ্যা প্রচুর। পরিচিত সকলের খোঁজ রাখছি। ভারতীয় দূতাবাস থেকে আজও ইমেল করে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি খারাপ বুঝলে আমাদের উদ্ধার করা হবে। আপাতত বাইরে বেরোতে বারণ করা হয়েছে।
কাল সকালে সাইরেনের শব্দে ঘুম ভেঙেছিল। বোমার আওয়াজও পেয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেল্টার রুমে আশ্রয় নিতে হয়েছিল আমাদের। রাতে ফের রকেট এসে পড়ে কাছাকাছি কোথাও। রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টা, বোমার শব্দে ঘনঘন কেঁপে ওঠে আকাশ-বাতাস। সেন্ট্রাল তেল আভিভে ২ থেকে ৩ কিলোমিটারের মধ্যে হামলা চলেছে বারবার। রাত বাড়তে বোমার শব্দ ক্রমশ থিতিয়ে আসে। রাত ১টা পর্যন্ত জেগে ছিলাম আমি। আর কোনও আওয়াজ পাইনি।
রাস্তাঘাট একেবারে ফাঁকা আজ। কোনও লোক নেই। সরকারের তরফ থেকে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ‘রেড অ্যালার্ট’ ও ‘হোম ফ্রন্ট কম্যান্ড’ এই দু’টো অ্যাপ থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি। ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধ যেহেতু নরমে গরমে চলতেই থাকে, এ দেশের বাসিন্দারা সীমান্তের খবর রাখতে অ্যাপ দু’টি ব্যবহার করেন। ‘হোম ফ্রন্ট কম্যান্ড’ অ্যাপে আজ দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল ইজ়রায়েলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কড়াকড়ি বাড়ানো হয়েছে এই অঞ্চলে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, বাড়ির ভিতরে ৫০ জনের বেশি মানুষ এক জায়গায় জমায়েত করতে পারবেন না। বাড়ির বাইরে যদি বেরোতে হয়, সে ক্ষেত্রে সর্বাধিক ১০ জন এক জায়গায় থাকতে পারবেন। দেশের সমস্ত স্কুল বন্ধ। অফিস যেতেও নিষেধ করা হচ্ছে। যদি কর্মক্ষেত্রের কাছাকাছি কোথাও শেল্টার রুম থাকে, তা হলেই একমাত্র অফিস যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে বাড়ি থেকে কাজ করার উপরেই জোর দেওয়া হচ্ছে বেশি। আপাতত মঙ্গলবার পর্যন্ত এই কড়াকড়ি জারি রাখার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।
শুনেছি প্যালেস্টাইনের জঙ্গিরা ঢুকে পড়েছে শহরে। সাবধান তো থাকতেই হবে।
(লেখক পরিচিতি: তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক)