(বাঁ দিকে) নাহিদ ইসলাম, মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গুরুত্ব পাচ্ছে না সংস্কার এবং বিচার! বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সুর চড়ালেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র প্রধান নাহিদ ইসলাম। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দাবি, ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের থেকে কোনও অংশে কম নয়!
বুধবার ওপার বাংলায় পালিত হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান নাহিদ। সেখানেই বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে মুখ খুললেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা এমন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই, যা সংস্কারের মাধ্যমে তৈরি হবে। এই নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। মানুষকে যাতে বার বার রক্ত দিতে না হয়, তা-ও দেখা উচিত।’’ মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে নাহিদ টেনে এনেছেন গত বছরের ‘অগস্ট বিপ্লব’-এর কথা। তাঁর দাবি, ‘‘মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ শহিদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে রক্ত দিয়েছে আমাদের বাংলাদেশের মানুষ।’’
তিনি মনে করেন, ‘‘আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তা বার বার বেহাত হয়েছে। বার বার রক্ত দিয়ে সেই স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে হয়েছে দেশের জনগণকে।’’ নাহিদের কথায়, ‘‘২০২৪ সালেও আমাদের ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। গণঅভ্যুত্থান করতে হয়েছে।’’ তাঁর মতে, ‘‘আমাদের দলের দাবি, বিচার, সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন হোক। আমরা মনে করি গণতন্ত্রের পথেই জাতির একটি উত্তরণ ঘটবে। কোনও একটি দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য যদি নির্বাচন চাপিয়ে দেওয়া হয়, তা অবশ্যই মেনে নেওয়া হবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি পুরনো সংবিধান এবং ব্যবস্থাকে আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
নাহিদ তাঁর কথায় কোনও নির্দিষ্ট দলের কথা বলেননি। তবে অনেকের মতেই খালেদা জিয়ার বিএনপি-কে নিশানা করে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালিন সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবসের আগে ইউনূস বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। নাহিম মনে করেন, সংস্কার ছাড়া যদি নির্বাচন হয়, তবে তা দেশের পক্ষে ক্ষতিকর!
২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন নাহিদ। সেই আন্দোলনের জেরে গত বছরের ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। পতন হয় আওয়ামী লীগের সরকারের। ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় বাংলাদেশে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার। সেই সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে ছিলেন নাহিদও। উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে নতুন দলের শীর্ষপদে বসেন তিনি।
সম্প্রতি দেশের সেনা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ় জ়ামান। তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। ওই বৈঠক নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই শীর্ষনেতার মতপার্থক্য প্রকাশ্যে এসেছে। হাসনাত আবদুল্লা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানিয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কয়েক জন নেতাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে ‘চাপ দিয়েছে’ সেনা। দলের আর এক মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম অবশ্য সেনার তরফে চাপ দেওয়া হয়েছে, এমন কিছু মানতে চাননি। তবে সেই মতপার্থক্যের মধ্যেই ইউনূস নির্বাচনের কথা জানান। সেই আবহে স্বাধীনতা দিবসে নির্বাচন নিয়ে তাঁর দলের অবস্থান স্পষ্ট করলেন নাহিদ।