Myanmar Conflict

মায়ানমারের গৃহযুদ্ধেও জাতপাতের অঙ্ক! সীমান্ত বেদখল হলেও রাজধানী এলাকায় ‘সুরক্ষিত’ জুন্টা

মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ ২০২৩ সালের নভেম্বরে সে দেশের সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিল। অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ১০২৭’।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:১৭
Myanmar rebels accelerate Operation 1027 against military junta, take control many areas of Rakhine State

মায়ানমারের জুন্টা প্রধান মিন আউং হ্লাইং। —ফাইল ছবি।

ক্ষমতা দখলের চতুর্থ বর্ষপূর্তির জন্য অপেক্ষা আর মাত্র দু’মাসের। কিন্তু বিদ্রোহী জোটের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে ইতিমধ্যেই বেসামাল মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকার। সরকারি বাহিনীকে হটিয়ে পড়শি তাইল্যান্ড এবং চিনের সীমান্তবর্তী এলাকার বড় অংশ আগেই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল বিদ্রোহী জোট। এ বার মাউংড, বুডিথং, পালেতওয়া-সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অধিকাংশ এলাকাই বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি দখল করেছে।

Advertisement

বিদ্রোহীদের ধারাবাহিক হামলার জেরে জুন্টা সেনার গতিবিধি এখন রাজধানী নেপিডো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গন এবং আরও কিছু বড় জনপদ-শিল্পাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিদ্রোহী জোট সেই এলাকাগুলি দখল করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সামরিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের যুক্তি, মায়ানমারের রাজধানী-সহ বড় জনপদগুলিতে মূলত সংখ্যাগুরু বামার জনগোষ্ঠীর বাস। তাঁদের বড় অংশ জুন্টার সমর্থক। প্রভাবশালী বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও এখনও জুন্টার পাশে রয়েছেন। অন্য দিকে, মূলত প্রান্তিক এলাকার শান, কারেনের মতো জনজাতি গোষ্ঠীগুলি রয়েছে বিদ্রোহীদের জোটে।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একদা জুন্টার ‘চক্ষুশূল’ রোহিঙ্গা মুসলিমরাও এখন সরকারি বাহিনীর সহযোগী! আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজ়েশন (আরএসও)-এর যোদ্ধারা গত ছ’মাস ধরে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জুন্টা ফৌজের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়েছে। যদিও তাতে ‘শেষরক্ষা’ হয়নি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করেছিল মায়ানমার সেনা। শুরু হয়েছিল সামরিক জুন্টার শাসন। তার আড়াই বছরের মাথায় নভেম্বর থেকে সে দেশের তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’ সামরিক জুন্টা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

ওই অভিযানের পোশাকি নাম ছিল ‘অপারেশন ১০২৭’। পরবর্তী সময়ে জুন্টা-বিরোধী যুদ্ধে শামিল হয় ‘চিন ন্যাশনাল আর্মি’ (সিএনএ) এবং চায়নাল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স (সিডিএফ), ‘কাচিন লিবারেশন ডিফেন্স ফোর্স’ (কেএলডিএফ) এবং সু চির সমর্থক স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’-এর সশস্ত্র বাহিনী ‘পিপলস ডিফেন্স ফোর্স’ (পিডিএফ)। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’, জুন্টা বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টি’ এবং তাদের সশস্ত্র শাখা বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির প্রতি সমর্থন জানায়।

বিদ্রোহীদের মদতপুষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী ‘দ্য ইউনাইটেড ওয়া স্টেট পার্টি’ (ইউডব্লিউএসপি) ইতিমধ্যেই কয়েকটি প্রদেশে সমান্তরাল সরকার চালানো শুরু করে দিয়েছে। তাইল্যান্ডে নির্বাসিত মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নাগরিকদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম ‘ইরাবতী’ খোলাখুলি বিদ্রোহীদের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। দক্ষিণ রাখাইনের গাওয়া, তাউনগুপ এবং আন শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন সরকারি সেনার সঙ্গে তুমুল লড়াই চলছে বিদ্রোহী বাহিনীর। বিদ্রোহী জোটের তরফে জুন্টা সেনার উপর হামলা চালাতে ‘ব্রিগেড ৬১১’ নামে একটি বাহিনী গঠন করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জনজাতিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে ওই বাহিনী। আরাকান আর্মির পাশাপাশি তারা এই মুহূর্তে রয়েছে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে।

Advertisement
আরও পড়ুন