Bangladesh Unrest

‘শুনলাম সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে’, বৈঠকে ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শ চাইলেন ইউনূস

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় একটি বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সংখ্যালঘু সমস্যার সমাধান সম্বন্ধে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২১:১৬
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে এ বার দেশের ধর্মীয় নেতাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। সেখানে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের অভিযোগের কথা একপ্রকার মেনেই নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেই সমস্যার সমাধানের বিষয়ে পরামর্শও চেয়েছেন। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, সংখ্যালঘু সংক্রান্ত যাবতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে ‘প্রকৃত তথ্য’ জানতে চেয়েছেন ইউনূস। তবেই এই সমস্যাগুলির সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। কী ভাবে ‘প্রকৃত তথ্য’ পাওয়া যায়, তারই পরামর্শ চেয়েছেন ধর্মীয় নেতাদের কাছে।

Advertisement

সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ইউনূস জানিয়েছেন, বাংলাদেশের একাংশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে, তা তিনি শুনেছেন। এর প্রতিকারের উপায় সন্ধান করছেন তিনি। ইউনূস বৈঠকে বলেছেন, ‘‘শুনলাম এখনও সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হচ্ছে। বাংলাদেশে নাগরিক হিসাবে সকল ধর্ম এবং জাতের সংবিধানস্বীকৃত অধিকার রয়েছে। সংখ্যালঘুরা যাতে দেশে নিরাপদে থাকেন, তা নিশ্চিত করা সরকারেরই কর্তব্য। কারও উপর নিগ্রহ বা অত্যাচারের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কখনও কোনও ঘটনা ঘটে গেলে আগে সে সম্বন্ধে প্রকৃত তথ্য পেতে হবে। সেই অনুযায়ী তাৎক্ষণিক প্রতিকার করতে হবে। তবেই গড়া যাবে নতুন বাংলাদেশ।’’

সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের খবর পেয়ে প্রথমেই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়েছিলেন, জানিয়েছেন ইউনূস। বাংলাদেশের আরও কিছু সংখ্যালঘু উপাসনাস্থল ঘুরে দেখেছেন তিনি। বিদেশি সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ সংক্রান্ত প্রচারকে ভিত্তিহীন বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘এখন বলা হচ্ছে হামলা হচ্ছে, অত্যাচার হচ্ছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি। সব দিকে দেখছি। যে ভাবে প্রচার করা হচ্ছে, তেমন কিছু হচ্ছে না। তাই প্রকৃত সত্য উদ্ধার করতে হবে।’’

গত অগস্ট মাসে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তার পর থেকেই সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বার বার বাংলাদেশের নানা প্রান্ত থেকে সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। কিছু দিন আগে সে দেশের সংখ্যালঘু নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর মুক্তির দাবিতে পথে নামেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা। আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গিয়েছে। এমনকি, কোনও আইনজীবীও পাননি চিন্ময়কৃষ্ণ। তাঁর জামিনের শুনানি এক মাস পিছিয়ে গিয়েছে। তাঁর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম, রংপুরের মতো এলাকায় বিক্ষোভ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নয়াদিল্লিও। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যেও নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, ভারত সরকারের উচিত, বাংলাদেশে শান্তিবাহিনী পাঠানোর জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জকে অনুরোধ করা। মমতার মন্তব্যের পাল্টা দিয়েছে ঢাকাও। ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের পাল্টা অভিযোগ তুলেছে তারা।

সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ প্রসঙ্গে ঢাকা বরাবর দাবি করে এসেছে, বিদেশি সংবাদমাধ্যমে ভুল প্রচার হচ্ছে। যে ভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে, বিষয়টি আদৌ তেমন নয়। প্রয়োজনে বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকায় গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসতেও বলা হয়েছে। তবে তার মাঝেই ঘরোয়া বৈঠকে সংখ্যালঘুদের সমস্যার কথা স্বীকার করে নিলেন ইউনূস।

Advertisement
আরও পড়ুন