সোদপুর অমরাবতী মোড়ে ১০০ মোমবাতি জ্বালিয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানানো হয়। —নিজস্ব চিত্র।
রাজপথ ধরে এগোচ্ছে মিছিল। যার একেবারে সামনে সাইকেল আরোহীদের পরনের সাদা গেঞ্জিতে লেখা ‘শিরদাঁড়া বিক্রি নেই’। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘একশো দিন বিচারহীন’ লেখা পোস্টার সাইকেলের সামনে ঝুলিয়ে, মশাল হাতে মিছিল চলল সোদপুর থেকে শ্যামবাজার।
আর জি কর-কাণ্ডের ১০০তম দিনে রবিবার মিছিলটির আয়োজন করেছিল ‘অভয়া মঞ্চ’। খুন ও ধর্ষণের ঘটনার দ্রুত ন্যায়বিচার, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলনের উত্তাপকে বাঁচিয়ে রাখতে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর সঙ্গে শতাধিক নাগরিক ও সামাজিক সংগঠন একত্রিত হয়ে তৈরি এই ‘অভয়া মঞ্চ’। দিন কয়েক আগেই এই মঞ্চের তরফে এ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। এ দিন বিকেলে আর জি কর-কন্যার মায়ের হাত থেকে মশাল নিয়ে শ্যামবাজারের দিকে রওনা দেন আরোহীরা। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান আরও অনেকে।
সোদপুর অমরাবতী মোড়ে ১০০ মোমবাতি জ্বালিয়ে ন্যায়বিচারের দাবি জানানো হয়। এর পরে বি টি রোড ধরে মিছিল এগোয় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সন্ধ্যা ৬টায় ১০০ সেকেন্ডের নীরবতা পালন হয় রাজ্যের ১০০টি জায়গায়। রাজপথে থমকে দাঁড়িয়ে সেই কর্মসূচি পালন করে মিছিল। একই ভাবে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের মানববন্ধনেও নীরবতা পালন করেন ‘অভয়া মঞ্চে’র অন্য সদস্যেরা।
শ্যামবাজারের ভূপেন বোস অ্যাভিনিউতে এ দিন তাঁদের মঞ্চ বাঁধতে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ‘অভয়া মঞ্চে’র সদস্যেরা। যদিও পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শেষে মঞ্চ বাঁধা হয়। ‘অভয়া মঞ্চে’র সদস্য চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, “বিকেল ৫টার মধ্যে মঞ্চ বাঁধা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। পুলিশের বাধায় দেরি হল। দ্রোহের সংস্কৃতি পালনে কেউ তো অশান্তি করতে আসেননি। এটা না বোঝার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধিক্কার জানাই।”
এ দিন নানা জেলা থেকেও মিছিল আসে। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দার্জিলিং, নদিয়া, রায়গঞ্জ, পুরুলিয়া, পূর্ব বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের হাতে মশাল তুলে দেওয়া হয়। পূর্ব বর্ধমানের মশালটি দেওয়া হয় চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর হাতে। কবিতা, গানের মাধ্যমে বিচারের দাবি তোলেন মানুষ। ‘অভয়া মঞ্চে’র প্রতিনিধিরা রাত ৯টা নাগাদ পাঁচ মাথার মোড়ে ‘জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টে’র কর্মসূচিতে যোগ দেন। ফের ১০০ মশাল জ্বালিয়ে স্লোগান ওঠে, ‘তিলোত্তমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘অতিক্রান্ত ১০০ দিন, অভয়া বিচারহীন’। ফ্রন্টের তরফে সৌম্যদীপ রায় বলেন, “যে চার্জশিট পেশ হয়েছে, সেটি কোনও ভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। সঞ্জয় রায় ছাড়া কারও নাম নেই। কাদের ষড়যন্ত্রে প্রমাণ লোপাট হল, তার উল্লেখও নেই।”
ফের রাত দখলে শ্যামবাজারে পথনাটক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিবাদও দেখা গিয়েছে। অন্য দিকে ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্সে’র তরফে জানানো হয়েছে, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের দু’জন প্রতিবাদী চিকিৎসককে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের নিয়ম অগ্রাহ্য করে বদলি করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে আজ, সোমবার স্বাস্থ্য ভবন অভিযান হবে।