গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় দিবসে স্বাধীনতা বিরোধী তথা পাকিস্তানপন্থী শক্তি জামায়াতে ইসলামি (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত) সম্পর্কে একটি বাক্যও বললেন না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস! তার বদলে নিশানা করলেন মুক্তিযুদ্ধের মূল শক্তি, প্রাক্তন শাসকদল আওয়ামী লীগকে।
গত ৫ অগস্ট জনবিক্ষোভে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, ‘‘ইতিহাসে এই প্রথম বার, বছরে দ্বিতীয় ‘বিজয় দিবস’ পেল বাংলাদেশ।’’ হাসিনা সরকারে পতনের ফলে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বলেও দাবি করেন তিনি। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সম্পর্কে একটি বাক্য বলেননি ইউনূস-সহ অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও কর্তা। বরং নয়াদিল্লিকে নিশানা করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি সাভারে মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক বলা হলেও, সেটি আসলে বন্ধুত্বের ছিল না।’’
৫৩তম বিজয় দিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচিতে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামাত নেতাদের অংশগ্রহণও ছিল লক্ষণীয়, যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। বাংলাদেশের বৃহত্তম বামপন্থী সংগঠন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) বলেছে, ‘মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ২০২৪ দিয়ে ১৯৭১–কে মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত শক্তি, বাংলাদেশের জন্মশত্রুরা তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধের রাজনীতি শুরু করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে মুছে ফেলে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।’
বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরকারি কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্ন অশান্তিরও খবর এসেছে সোমবার। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো জানিয়েছে, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে স্থানীয় লোকজনের একাংশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়ি ভাঙচুর করে। তাঁকে শারীরিক ভাবে হেনস্থারও অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার শহিদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে জামাতের হামলার শিকার হন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা। অন্য দিকে, প্রাক্তন শাসকদল বিএনপি বিজয় দিবসের দিনেও দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছে। দলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান তারেক রহমান সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘জনপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে নতুন সংসদ এবং সরকার গড়তে হবে। বৈষম্য ও বিভাজনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এই ঐক্যকে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জনগণের ক্ষমতায়ন ছাড়া জাতীয় ঐক্য শক্তিশালী বা টেকসই হতে পারে না।’’