বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস। Sourced by the ABP
এক দিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, অন্য দিকে জাতীয় পার্টির মতো একটি নথিভুক্ত রাজনৈতিক দলকে চটিয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে ফেলল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার।
চট্টগ্রামে সনাতন জাগরণ মঞ্চ নামে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সমাবেশে জাতীয় পতাকার অমর্যাদা করা হয়েছে বলে এক বিএনপি নেতার অভিযোগ পেয়ে ইসকনের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী এবং অন্য ধর্মীয় সংগঠনের মোট ১৯ জন নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে এজাহারে নাম থাকা দুই সংখ্যালঘু তরুণকে গ্রেফতারের পর থেকেই চট্টগ্রাম ও দেশের সংখ্যালঘু প্রধান এলাকাগুলি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের চেরাগী মোড়ের বিক্ষোভ সমাবেশে বিপুল জনসমাগমের পরে শুক্রবার দেশের ৬৪টি জেলাতেই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিল সনাতন জাগরণ মঞ্চ। সেই কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দফায় দফায় বাধা ভেঙে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ সভাগুলিতে অংশ নেন। পরিস্থিতির চাপে ফিরোজ খান নামে তাদের যে স্থানীয় নেতা পুলিশে অভিযোগটি করেছিলেন, তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন বিএনপি নেতৃত্ব।
সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন ও হেনস্থার অভিযোগের বিরুদ্ধে ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে সনাতন জাগরণ মঞ্চের সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। এলাকার সর্বত্র ছোট ছোট তিন কোনা গেরুয়া পতাকা লাগান স্বেচ্ছাসেবকরা। নগরের জ়িরো পয়েন্ট এলাকায় একটি স্তম্ভের উপরে জাতীয় পতাকা লাগানো ছিল। সেই স্তম্ভের উপরেও একটি গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেন কেউ। ফিরোজ খান পুলিশে অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে। এর পরে বুধবার মাঝরাতে বাড়ি থেকে দুই তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয় চিন্ময় দাস ও অন্যদের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার নিজের এক্স হ্যান্ডলে আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং নির্বাচনে ফের রিপাবলিকানদের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে ‘হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের উপরে চরম নির্যাতন’-এর অভিযোগ করে তার কঠোর নিন্দা করেন। তিনি মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে ব্যর্থ নীতি নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে না পারাটা আসলে বাইডেনের ব্যর্থতা।’ ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের মতে, বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে ইউনূস সরকারকে বসানোর পিছনে যে আমেরিকার চক্রান্ত— কার্যত সে বিষয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন ট্রাম্প।
সরকার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘সাজানো খুনের মামলা’ করছে অভিযোগ করে শনিবার জাতীয় পার্টির নেতারা ঢাকায় সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। তার আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোটা-বিরোধী ছাত্রদের নেতা হাসনাত আবদুল্লা ও সারজিস আলমের ডাকে জাতীয় পার্টির দফতরে হামলা চালানো হয়। জাতীয় পার্টির কর্মীরা তা প্রতিহত করলে ‘ছাত্র-জনতা’ সরে যায়। রাতে কর্মীরা চলে গেলে ফের তারা এসে অরক্ষিত দফতরে ঢুকে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মহম্মদ কাদের শুক্রবার জানিয়েছেন, নিজেদের দফতরের সামনে শনিবার তাঁরা সমাবেশ করবেন। হাসনাতরা ঘোষণা করেছেন, কোনও ভাবেই এই সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। রাতে প্রশাসনের তরফে ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির দফতর সংলগ্ন সব রাস্তায় সভা-সমাবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কাদের বলেছেন, এর পরেও সমাবেশ হবে। সুতরাং ফের উত্তেজনা ও সংঘর্ষের মুখে ঢাকা। এর জন্য মানুষ দায়ী করছেন ইউনূসের অনুগত ছাত্রদের হঠকারী আচরণকে।