ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বেরোচ্ছেন মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: এক্স।
মঙ্গলবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করলেন অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বললেন, ‘‘ধৈর্য্য ধরুন। সরকারের উপর বিশ্বাস হারাবেন না। একটু ধৈর্য্য ধরে দেখুন সরকার কী করতে পারে। আমরা ভুল করলে নিশ্চয়ই সমালোচনা করবেন, কিন্তু আগে কিছু করতে তো দিন!’’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ঐক্য সভা, মহানগর পূজা কমিটি এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্যেরাও।
মঙ্গলবার ঢাকেশ্বরী মন্দির দর্শনে গিয়ে ইউনূস বলেন, ‘‘দেশে মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’’ হিন্দুদের উদ্দেশ্যে ইউনূস বার্তা দেন, ‘‘নিজেদের আলাদা ভাববেন না। সব পরিচয়ের ঊর্দ্ধে উঠে নিজেদের মানুষ বলে মনে করুন। দেশের সন্তান বলে মনে করুন। এগুলো আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার, যা আমরা সুনিশ্চিত করবই।’’ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এবং সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা। সর্বজনীন পূজা কমিটির পক্ষ থেকে ছিলেন জয়ন্তকুমার দেব এবং তাপসচন্দ্র পাল। এ ছাড়াও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য সভার পক্ষ থেকে ছিলেন কাজল দেবনাথ এবং মনীন্দ্রকুমার নাথ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ইউনূসের সামনে আট দফা দাবি তুলে ধরেছেন বলে জল্পনা। এই দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে হামলার ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, সংখ্যালঘুদের জন্য আলাদা মন্ত্রক তৈরি করা ইত্যাদি।
সোমবারই সে দেশের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা আবুল ফৈজ মহম্মদ খালিদ হোসেন জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ইউনূস। খালিদ আরও বলেন, ‘‘সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণকারীরা দুর্বৃত্ত। তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করে এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার কড়া নিন্দা করে।’’ খালিদ জানিয়েছেন, সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা হলে তা রিপোর্ট করার জন্য একটি হটলাইন চালু করা হবে। এ ছাড়া ভাঙচুর হওয়া সমস্ত বাড়ি ও মন্দিরের একটি তালিকাও তৈরি করা হবে। যাঁরা এ সবের শিকার হচ্ছেন, তাঁদের সকলকে আর্থিক সহায়তা দেবে অন্তর্বর্তী সরকার।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক টালমাটাল পরিস্থিতিতে সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর গত কয়েকদিনে বার বার হামলার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের তরফে এই বিষয়ে প্রথম একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। বিবৃতিতে লেখা হয়, “দেশের কোথাও কোথাও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি উদ্বেগজনক।” নয়া সরকারের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনও ক্ষমা চেয়ে নেন দেশের সংখ্যালঘু সংপ্রদায়ের কাছে। বলেন, ‘‘আমার সংখ্যালঘু ভাইদের যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। সমাজের কাছে আর্জি, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষিত রাখুন। এরা আমাদের ভাই। আমরা এক সঙ্গেই বেড়ে উঠেছি।’’
প্রসঙ্গত, প্রবল জনরোষের মুখে পড়ে ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। তার পরেই নতুন করে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অংশে। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু গত ৪ থেকে ৬ অগস্টের মধ্যেই সে দেশে হিংসার ঘটনায় অন্তত ৩২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশের ৫২ জেলায় ২০৫টিরও বেশি সংখ্যালঘু-হামলার অভিযোগ উঠেছে। এর পরেই পথে নামেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুরা। জীবন এবং জীবিকা বাঁচানোর দাবিতে শনি ও রবিবার চট্টগ্রামে মিছিল করেন সংখ্যালঘু সমাজের হাজার হাজার মানুষ। মিছিল থেকে স্লোগান উঠেছে, “মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে আমরা কোথাও যাব না।”