মুহাম্মদ ইউনূস। —ফাইল চিত্র।
বাংলাদেশে সেনাদের হাতে গ্রেফতার ও জরিমানা করার ক্ষমতা দেওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা বলে মনে করছেন অনেকে। কারও কারও আবার ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারকে সরিয়ে বাংলাদেশে পুরোদস্তুর সেনাশাসন কায়েমের পথে এটা প্রথম ধাপ। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বুধবার দাবি করেছেন, গোটা দেশে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতেই সর্বত্র মোতায়েন সেনাবাহিনীকে এই ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। মাত্র দু’মাসের জন্য যে সেনারা এই ক্ষমতা ভোগ করবে, সেটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার শাখার একটি দল এখন বাংলাদেশে ঘুরে ঘুরে বিক্ষোভ দমনে আগের সরকারের বলপ্রয়োগ, মানবাধিকার ভঙ্গ এবং প্রাণহানির ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখছে। অন্তর্বর্তী সরকার চাইছে এমন কোনও ছবি যেন তাদের কাছে না-পৌঁছয়, যাতে সরকারের মুখ পোড়ে। ৫ অগস্ট আগের সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছিল। থানা পুলিশের অনুপস্থিতিতে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানি চরমে পৌঁছেছিল। সেই পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও দল বেঁধে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা করা, ধর্মস্থান আক্রমণের মতো ঘটনা ঘটছে। এগুলোকে সরকার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের অপপ্রচার আখ্যা দিয়ে গুরুত্ব না দিলেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে পশ্চিমি সরকার ও গণমাধ্যমেও। অস্ট্রেলিয়ার মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন দু’দিন আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কানাডার এক এমপি-ও একই ভাবে উদ্বেগ জানিয়ে সংসদ ভবনের বাইরে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। পশ্চিমি কিছু মানবাধিকার সংগঠনও বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছে। কেউ কেউ রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরে চিঠিও দিয়েছে। এ মাসেই রাষ্ট্রপঞ্জের বৈঠকে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় থাকা দলটির কাছে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চাইছে সরকার।
পাশাপাশি দেশের প্রায় সর্বত্র সুফি মাজার ও বাউল সম্প্রদায়ের উপরে হামলার ঘটনা ঘটছে। মাদ্রাসা ছাত্রদের নেতৃত্বে রোজই প্রায় ভাঙা হচ্ছে চার-পাঁচশো বছর ধরে টিকে থাকা এই মাজারগুলি। ইসলাম-বিরোধী আখ্যা দিয়ে সেখানে গান-বাজনা বন্ধ করা হচ্ছে। সরকার এই সব বিষয়ে রাশ টানতে ব্যর্থ। সূত্রের খবর, সেনারাও এই সব নিয়ে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতায় রুষ্ট হয়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ‘দখল করল’। এর পরে পরিস্থিতি আরও জটিল হলে বাংলাদেশের শাসনভার পুরোটা তুলে নিতেও যে তারা তৈরি, সেই বার্তাই দিল সেনাবাহিনী।