এ বার ইজ়রায়েল বনাম হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীর সংঘাতের কেন্দ্র হল সিরিয়া। ছবি: রয়টার্স।
গাজ়া ভূখণ্ড এবং লেবাননের পরে এ বার ইজ়রায়েল বনাম হিজ়বুল্লা গোষ্ঠীর সংঘাতের কেন্দ্র হল সিরিয়া। ইরানের মদতপুষ্ট শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীটি মঙ্গলবার অধিকৃত ‘সিরিয়ান গোলান মালভূমি’ (গোলান হাইটস) এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
ইজ়রায়েল সরকারের দাবি, গোলান মালভূমির দ্রুজ ভাষাভাষী গরিষ্ঠ মাজদাল শামস শহরে রকেট হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। পাল্টা লেবাননে হিজ়বুল্লার ঠিকানায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইজ়রায়েল ফৌজ। প্রসঙ্গত, ১৯৬৭ সালে ‘ছ’দিনের যুদ্ধ’ পর্বে সিরিয়ার গোলান মালভূমির ওই অঞ্চলের দখল নিয়েছিল ইজ়রায়েল সেনা। সেটি এখনও তাদের দখলেই রয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর গাজ়া থেকে ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে হামাসের রকেট হামলার পরেই স্বাধীনতাপন্থী প্যালেস্টাইনি সংগঠনটিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল হিজ়বুল্লা। উপস্থিতি জানান দিতে ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে তিনটি রকেট ছুড়ে ‘প্রতীকী হামলা’ চালানো হয়েছিল সে সময়। তার পর থেকে তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক লড়াই চলছে ইজ়রায়েলি ফৌজের। হিজ়বুল্লা কথার অর্থ ‘আল্লার দল’। ইরানের মদতপুষ্ট লেবাননের শিয়া মুসলিমদের এই দল বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় থেকেছে।
১৯৮০-র দশকে লেবাননের গৃহযুদ্ধের মধ্যেই হিজ়বুল্লা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। ১৯৯২ সাল থেকে এই গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ধর্মগুরু এবং রাজনৈতিক নেতা হাসান নাসরাল্লা। জুন মাসের গোড়ায় ইজ়রায়েলি হানায় হিজবুল্লার শীর্ষ সামরিক নেতা তালেব সামি আবদুল্লা নিহত হয়েছিলেন। তার পর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তেল আভিভের নিশানা হয় হিজ়বুল্লার শীর্ষ কমান্ডার মহম্মদ নামেহ নাসের। প্রতিরক্ষা বিশারদদের একাংশের মতে, আয়রন ডোম-সহ ইজ়রায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলিতে যত ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, তার চেয়ে হিজবুল্লার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের সংখ্যা বেশি। সে কারণে তাদের হামলা পুরোপুরি ঠেকানো ইজ়রায়েলি সেনার এয়ার ডিফেন্স ইউনিটগুলির পক্ষে সম্ভব না–ও হতে পারে।
প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের চেয়ে লেবাননের হিজবুল্লার যোদ্ধার সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। অস্ত্রসম্ভারেও অনেক এগিয়ে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠীটি। নানা ক্যালিবার এবং পাল্লার রকেটের পাশাপাশি ইরানের মদতপুষ্ট এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে রয়েছে ‘গাইডেড’ ক্ষেপণাস্ত্রও! রয়েছে শক্তিশালী ড্রোন। পশ্চিমী সংবাদমাধ্যমের দাবি, ইরানের সামরিক প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে বেশ কয়েকটি পুরনো রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আধুনিকীকরণের কাজও সেরে ফেলেছে হিজবুল্লা। ফলে সর্বাত্মক যুদ্ধ বাধলে গোটা পশ্চিম এশিয়া এমনকি, ইউরোপেও তার আঁচ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রাষ্ট্রপুঞ্জের।