হামলার বিষয়ে পাক সেনাকে আগাম নোটিস দিয়ে রেখেছিল ইরান সরকার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ইরান যে ১৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের ‘ঘরে’ হামলা চালাবে, তা নাকি আগে থেকেই পাক সেনাকে জানিয়েছিল সে দেশের সরকার। কিন্তু এই হামলার বিষয়টি যে প্রকাশ্যে আসবে তা নাকি ইসলামাবাদকে জানায়নি তেহরান। আর সেখান থেকেই গন্ডগোলের সূত্রপাত। সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, এমন তথ্যই উঠে এসেছে ইরানের এক স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে।
ইরানের ওই স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামলার বিষয়ে পাক সেনাকে আগাম নোটিস দিয়ে রেখেছিল ইরান সরকার। কিন্তু ইরান যে সেই হামলার কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবে, সেই কথা জানানো হয়নি ইসলামাবাদকে। সূত্র মারফত এমনটাই জানা গিয়েছে বলে ইরানের ওই সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। ওই সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ‘‘ইরান হামলা চালিয়ে তা জনসমক্ষে না-ই আনতে পারত।’’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড-এর সঙ্গে যোগসূত্র থাকা একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল ১৮ জানুয়ারি লিখেছে, ‘‘পাকিস্তানের ওই জঙ্গি ঘাঁটিতে হামলার জন্য পাকিস্তান সরকারের সমন্বয় প্রয়োজন ছিল।’’ ওই টেলিগ্রাম চ্যানেলে আরও যোগ করা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের আক্রমণটিও দু’দেশের চুক্তির মধ্যেই ছিল। দুই দেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গি দমনে এবং স্থায়ী নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য যে সংকল্প নিয়েছে, তার জন্যই এই হামলা।’’
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে থাকা ইরানীয় রাষ্ট্রদূত হাসান কাজেমি-কওমি সম্প্রতি পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন। কয়েক জনের ধারণা, ইরানের হামলার বিষয়ে ইসলামাবাদকে অবহিত করতেই পাক সফরে গিয়েছিলেন হাসান। যদি সেই প্রতিবেদনগুলির দাবি সত্যি হয়, তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে, ইরান এবং পাকিস্তান— উভয় পক্ষই একে অপরের উপর হামলার সম্পর্কে অবহিত ছিল। তবে প্রতিবেদনগুলির সত্যতা এখনও যাচাই করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ইরান-পাকিস্তান ‘সংঘাতের’ সূত্রপাত মঙ্গলবার থেকে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের বালুচিস্তানে জঙ্গি সংগঠন জইশ আল অদলের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায় ইরান। পাকিস্তানের উপর হামলার কথা ইতিমধ্যেই স্বীকার করেছে তেহরান। ইরানের বিদেশমন্ত্রী স্বীকার করেছেন যে, ওই হামলার লক্ষ্য ছিল জঙ্গি সংগঠন জইশ অল অদল বা ‘আর্মি অফ জাস্টিস’-এর ঘাঁটি ধ্বংস করা। ইরানের দাবি ছিল, এই জঙ্গি সংগঠনের কার্যকলাপ মূলত ইরান-পাকিস্তান সীমান্ত জুড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে ওই জঙ্গি গোষ্ঠী ইরানের মাটিতে বেশ কয়েকটি হামলা চালিয়েছে বলেও সে দেশের দাবি। আর সেই কারণেই জইশ অল অদল সংগঠনের ঘাঁটি উচ্ছেদ করতে পাকিস্তানের ‘সবজ কোহ’ গ্রামে মঙ্গলবার হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান। এই হামলার পরেই গর্জে ওঠে ইসলামাবাদ। ইরানের হামলায় পাকিস্তানের দু’জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তান হুঁশিয়ারি দেয়, ‘ফল ভুগতে হবে’ ইরানকে। এর পরে বৃহস্পতিবার ইরানের উপর পাল্টা হামলা চালায় পাকিস্তান। এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের ‘মার্গ বার সরমাচার’ নামক ওই অভিযানে ‘বেশ কয়েক জন সন্ত্রাসবাদী’র মৃত্যু হয়েছে।
ইরান এবং পাকিস্তানের হামলা-পাল্টা হামলার আবহে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফাটল ধরে। পাক হামলাকে মোটেও ভাল চোখে দেখেনি ইরান। তাদের বিদেশ মন্ত্রক বৃহস্পতিবারই তেহরানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ‘প্রবীণ এবং অভিজ্ঞ’ কূটনীতিককে তলব করেছে এবং তাঁর কাছ থেকে পাক হামলার কৈফিয়ত চাওয়া হয়। বায়ুসেনার মহড়াও শুরু করেছিল ইরান। ইরান-পাকিস্তানের সংঘাত নিয়ে উত্তেজনায় টান টান হয়ে ওঠে মধ্য এশিয়া। তবে দুই দেশের মধ্যে তৈরি হওয়া সেই উত্তেজনা কমেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্মতি জানিয়েছে দুই দেশই।