ইমরান খান। —ফাইল চিত্র।
দলের প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খান-সহ আরও বহু প্রার্থীর মনোনয়ন খারিজ করে দেওয়ার জেরে নির্বাচন ট্রাইবুনালের দ্বারস্থ হল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। গত ৩০ ডিসেম্বর স্ক্রুটিনির পরে পিটিআইয়ের অধিকাংশ প্রার্থীর মনোনয়নখারিজ হয়ে যাওয়ার কথা জানা গিয়েছে। দলের তরফে রুফ হাসান জানিয়েছেন, প্রত্যেকটি খারিজ হওয়া মনোনয়ন নিয়ে ট্রাইবুনালে যাওয়া হবে। নিয়ম মেনে এটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়েও ভেবে রাখা হচ্ছে।
পিটিআই জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের থেকে প্রার্থীরা নথি নেওয়া শুরু করেছেন রবিবার থেকেই। আজ থেকে ট্রাইবুনালে আবেদন করা শুরু হচ্ছে। অনেক প্রার্থীই নিজস্ব আইনজীবী মারফত আবেদন করছেন। অন্যদের দলের তরফে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আজ আদিয়ালা জেলে গিয়ে আলাদা আলাদা ভাবে ইমরানের সঙ্গে দেখা করেছেন দুই আইনজীবী।
ইমরান এ বার লাহোর এবং তাঁর নিজের শহর মায়ানওয়ালির একটি করে আসন থেকে মনোনয়ন জমা করেছেন। অবাধ নির্বাচন হলে পিটিআইয়ের কাছে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে এ ভাবে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস’ চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ৪৪টি কেন্দ্রে ২৮১ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা করেছিলেন। তার মধ্যে ৯৫টি মনোনয়নপত্র খারিজ হয়েছে। গ্রাহ্য হয়েছে ১৮৬টি।
‘উপরতলার অঙ্গুলিহেলনে’ রিটার্নিং অফিসারেরা কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করছে পিটিআই। তাদের বক্তব্য, ১৩২ নম্বর আসনের রিটার্নিং অফিসার গ্রাহ্য মনোনয়নগুলির যে তালিকা প্রথমে প্রকাশ করেছিলেন,তাতে মোট ১৯ জনের মধ্যে পিটিআই-এর মহম্মদ সালিমের নামও ছিল।কিন্তু পরে প্রকাশিত সংশোধিত তালিকায় দেখা যায়, শুধু সালিমের নামই বাদ পড়েছে। দলের প্রার্থী সর্দার আজিমুল্লা খানেরও অভিযোগ, স্ক্রুটিনিতে তাঁর মনোনয়নপত্র যথাযথ বলে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু ইসলামাবাদ থেকে ‘গোপন রিপোর্ট’ না আসা ইস্তক শংসাপত্র দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছিলেন রিটার্নিং অফিসার।
২০২২ সালের মাঝামাঝি বিরোধিতার মুখে মাঝপথে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন ইমরান। তার পরে তোশাখানা মামলায় গত ৫ অগস্ট তাঁর জেল হয়। সেই সূত্রে তাঁর পাঁচ বছর পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ায় নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখনও জেলেই রয়েছেন ৭১ বছরের এই প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকেই মনোনয়ন জমা করেছিলেন। এ দিকে, একই তোশাখানা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে কাটিয়ে সম্প্রতি পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফ। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মামলা খারিজ হয়েছেপাক আদালত।
পিটিআই-এর অভিযোগ, সেনার সাহায্যে ফের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার চেষ্টা করছেন নওয়াজ়। সম্প্রতি লাহোর হাই কোর্টে একব্যক্তি মামলা দায়ের করে দাবি করেছিলেন, তোশাখানার উপহার প্রকাশ্যে না আনার জন্য ইমরানের কারাদণ্ড হওয়ায় অন্য পাক প্রধানমন্ত্রী ও আইনসভার সদস্যদেরও উপহারগুলি প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দেওয়া হোক। মামলায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ়, ইউসুফ রাজ়া গিলানি এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জ়ারদারি প্রমুখের নাম উল্লেখ করা হয়। অভিযোগ করা হয়, শুধু ইমরান বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আদালত সেই আবেদন অবৈধ বলে খারিজকরে দেয়।
‘প্রাক্ নির্বাচন রিগিং’-এর ভিডিয়ো এবং অন্য তথ্যপ্রমাণ জড়ো করার জন্য পিটিআই একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টও চালু করেছে। সমাজমাধ্যমে যা তুলে ধরে প্রচারশুরু হয়েছে।