India-Maldives Row

‘মুইজ্জুর নেতৃত্বেই মলদ্বীপে শুরু হয়েছে ভারত-বিরোধী প্রচার’, কেন দাবি করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন?

বলা হয়েছে, ‘‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পিএনসি নেতা মুইজ্জুকে সমর্থনকারী ‘প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপ’ (পিপিএম)-ও খোলাখুলি ভারত-বিরোধী প্রচারে অংশ নিয়েছিল।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:১৪
মলদ্বীপ নিয়ে রিপোর্ট এ বার ইউরোপীয় ইউনিয়নের।

মলদ্বীপ নিয়ে রিপোর্ট এ বার ইউরোপীয় ইউনিয়নের। — ফাইল চিত্র।

মলদ্বীপে গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পর্ব থেকেই ধারাবাহিক ভাবে ভারত-বিরোধী প্রচার চলছে। আর সেই প্রচার শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘চিনপন্থী’ নেতা তথা ‘পিপল্‌স ন্যাশনাল কংগ্রেস’ (পিএনসি)-এর প্রধান মহম্মদ মুইজ্জু (বর্তমানে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট) প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের জেরে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েনের আবহে এই দাবি করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

Advertisement

গত সেপ্টেম্বরে দু’দফায় মলদ্বীপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়েছিল। সেই ভোটে মলদ্বীপ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এমডিপি)-র নেতা ইব্রাহিম মহম্মদ সোলিকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রেসিডেন্টের কুর্সি দখল করেছিলেন মুইজ্জু। সেই ভোট সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর্যবেক্ষক দল ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ইলেকশন অবজ়ারভেশন মিশন’-এর রিপোর্টে ওই ভারত-বিরোধী প্রচারের উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পিএনসি নেতা মুইজ্জুকে সমর্থনকারী ‘প্রোগ্রেসিভ পার্টি অফ মলদ্বীপ’ (পিপিএম)-ও খোলাখুলি ভারত-বিরোধী প্রচারে অংশ নিয়েছিল।’’

প্রসঙ্গত, মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গায়ুম পিপিএম দলের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৭৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছ’দফায় প্রেসিডেন্ট পদে থাকা ওই প্রবীণ নেতা ‘ভারতের বন্ধু’ বলেই পরিচিত ছিলেন। ১৯৮৮ সালে মামুনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থান হয়েছিল মলদ্বীপে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর নির্দেশে ভারতীয় সেনা ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রে গিয়ে তাঁর সরকারকে রক্ষা করেছিল। ভারত-বিরোধী প্রচারে মামুনের দলের অংশীদারি তাই নয়াদিল্লির পক্ষে অস্বস্তির বলেই মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে ‘চিনপন্থী’ নেতা মুইজ্জু দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ভারতের বিরুদ্ধে একের পর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যা নিয়ে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্যের মোকাবিলা করতে সক্রিয় মোদী সরকার। আমেরিকার নেতৃত্বে গড়া কোয়াড-এ তারা প্রভাব বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। কিন্তু তার আগে সমুদ্রপথ নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগে পড়ছে সাউথ ব্লক। তার অন্যতম কারণ ‘চিন-ঘনিষ্ঠ’ মুইজ্জু।

ক্ষমতায় এসেই মুইজ্জু মলদ্বীপে মোতায়েন ভারতীয় সেনাকে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। সম্প্রতি, তিনি নয়াদিল্লির সঙ্গে চার বছরের পুরনো জলচুক্তি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। ওই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় নৌবাহিনীর নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় সাহায্য করার জন্য মলদ্বীপের জলসীমায় ‘হাইড্রোগ্রাফিক’ সমীক্ষা চালানোর অনুমতি মিলত। চুক্তি বাতিলের ফলে তা বন্ধ হয়েছে।

এই আবহে সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লক্ষদ্বীপে গিয়েছিলেন মোদী। সেই সফরের বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অভিযোগ, মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী, মরিয়ম শিউনা, মালশা শরিফ এবং মাহজ়ুম মাজিদ কিছু ছবিতে মোদীকে ‘পুতুল’ এবং ‘জোকার’ বলে মন্তব্য করেন। ভারত-ইজ়রায়েল সম্পর্ক নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়।

পরে অবশ্য বিতর্কের মুখে পোস্টগুলি মুছে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মলদ্বীপের বিরোধী নেতাদের চাপের মুখে তিন মন্ত্রীকে সাসপেন্ড করতে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। কিন্তু বিতর্ক তাতে থামেনি। এই পরিস্থিতিতে মলদ্বীপের বিরোধী দলগুলি মুইজ্জুকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বরখাস্ত করার আবেদন জানিয়েছে পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে।

Advertisement
আরও পড়ুন