Earthquake in Turkey and Syria

বেড়ে চলেছে মৃতের সংখ্যা, কেন এত ধ্বংসাত্মক হল তুরস্ক ভূমিকম্প? নেপথ্যে ‘ভিলেন’ কি এক তরঙ্গ?

তুরস্কের বেশির ভাগ অংশ অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের উপর রয়েছে। এই প্লেটকে ঘিরে রেখেছে আফ্রিকা, ইউরেশীয় এবং আরবীয় প্লেট। আফ্রিকা এবং আরবীয় প্লেটের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে কেঁপে ওঠে তুরস্ক।

Advertisement
সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:২৪
Rayleigh Waves became dreadful in Turkey

যে ভাবে ভূপৃষ্ঠের নীচে তরঙ্গ সৃষ্টি হয়েছিল। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আমাদের পৃথিবীটা কয়েকটি প্লেটের উপর ভাসছে। ভূগোলের ভাষায় যে প্লেটগুলিকে টেকটনিক প্লেট বলে। এই প্লেটগুলির নীচে তরল লাভা রয়েছে। যেগুলির উপর ভাসছে প্লেটগুলি। এই প্লেটগুলির একে অপরের সঙ্গে ধাক্কার জেরেই ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। কখনও এই সংঘর্ষ এতটাই জোরে হয় যে, কোনও একটি প্লেটের কোনা মুড়ে যায়, আবার অতিরিক্ত চাপ পড়লে কোনও প্লেট ভেঙেও যায়। আর এই সংঘর্ষে সৃষ্ট বিপুল শক্তি বেরিয়ে আসার পথ খোঁজে। এর প্রভাবেই ভূমিকম্প হয়।

কেন ভূমিকম্প হয়, এ তো গেল তার ভৌগোলিক কারণ। তবে তুরস্কের ক্ষেত্রে কী হয়েছে। কেন এত ধ্বংসাত্মক হল তুরস্কের এই ভূমিকম্প? ভূবিজ্ঞানীদের মতে, টেকটনিক প্লেটের সঞ্চালন ছাড়াও রয়েছে আরও একটি কারণ। তা হল তরঙ্গের প্রকৃতি। তুরস্কের বেশির ভাগ অংশ অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের উপর রয়েছে। এই প্লেটকে ঘিরে রেখেছে আফ্রিকা, ইউরেশীয় এবং আরবীয় প্লেট। আফ্রিকা এবং আরবীয় প্লেটের মধ্যে যখন সংঘর্ষ হয়, তখনই কেঁপে ওঠে তুরস্ক। তাই তুরস্কে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হয়ে থাকে। তবে এ বারের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পিছনে বেশি ভূমিকা হয়েছে কম্পনে সৃষ্ট তরঙ্গের প্রকৃতি।

Advertisement

যখন টেকটনিক প্লেট নড়েচড়ে ওঠে তার থেকে সৃষ্ট শক্তি দু’টি ধাপে চারটি তরঙ্গের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে তাণ্ডবলীলা চালায়। প্রথম ধাপটিকে বলা হয় ‘গ্রাউন্ড ওয়েভস’।

earthquake in turkey

বহুতল ভেঙে পড়েছে কম্পনে। ছবি: রয়টার্স।

গ্রাউন্ড ওয়েভস: এই ধাপে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে দু’ধরনের তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে ধ্বংসলীলা চালায়। একটি হল পি ওয়েভ, অন্যটি হল এস ওয়েব। পি ওয়েভ অনেকটা স্প্রিংয়ের মতো হয়। এই তরঙ্গে পিছনের দিকে রিংগুলি সামনের দিকের রিংগুলির উপর চাপ দিতে দিতে এগোয়। এর তরঙ্গের দৈর্ঘ্য এবং গতি অত্যন্ত বেশি। ফলে ভূপৃষ্ঠে দ্রুত পৌঁছয় এই তরঙ্গ। এস ওয়েভ অনেকটা ইংরেজি হরফ এস-এর মতো এগোতে থাকে। তবে এই তরঙ্গের গতি পি ওয়েভের তুলনায় কম।

সারফেস ওয়েভস: দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে রয়েছে ‘সারফেস ওয়েভ’। এটি আবার দু’ধরনের। একটি হল, রেলি ওয়েভ, অন্যটি লাভ ওয়েভ। রেলি ওয়েভ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এগোতে থাকে। কোনও স্থির জলে যখন ঢিল মারা হয়, তার ফলে যে ধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, রেলি ওয়েভ ঠিক সেই ধরনের। আর এই তরঙ্গ অত্যন্ত শক্তিশালী। ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালায় এই তরঙ্গ। আর এই তরঙ্গই আছড়ে পড়েছে তুরস্কে। যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। তুরস্কের ভূমিকম্পে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বহু গুণ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে প্রশাসন। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টে নাগাদ ধ্বংসলীলা চালায় ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে তীব্রতা ছিল ৭.৮। তার পরে প্রায় ৫০টি আফটারশক হয়।

ফিলিপিন্সের ভূবিজ্ঞানী রেনাটো সালিডমের মতে, ৭ তীব্রতার কম্পন থেকে সৃষ্ট শক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমায় পড়া পরমাণু বোমা থেকে সৃষ্ট শক্তির প্রায় ৩২ গুণ। তবে এই ধরনের কম্পনে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করে ওই অঞ্চলের জনঘনত্ব এবং কম্পনের উৎসস্থল ভূপৃষ্ঠের কতটা গভীরে তার উপর।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ভূকম্পন বিশেষজ্ঞ জানুকা আট্টানায়কের মতে ৭.৮ মাপের ভূমিকম্প অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। ৫.৯ তীব্রতার চেয়ে তা প্রায় ৭০৮ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই মাপের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে যে শক্তি নির্গত হয় তার পরিমাণ ৩২ পেটাজ়ুল। যে শক্তি দিয়ে নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহরে চার দিন বিদ্যুৎ মিলতে পারে।

আরও পড়ুন
Advertisement