নিজ্জর খুনের তদন্তে এ বার আমেরিকা? ছবি: রয়টার্স।
কানাডার মাটিতে সে দেশের খলিস্তানি নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জরকে খুনের ঘটনায় ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর ‘ভূমিকা’ নিয়ে তদন্তের কাজে আমেরিকার সাহায্য নিচ্ছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। কানাডা প্রশাসনের একটি সূত্র উদ্ধৃত করে বুধবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রকাশিত একটি খবরে এই দাবি করা হয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, নিজ্জর খুনের ঘটনার তদন্তে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করছে কানাডা পুলিশ। অন্য দিকে, আমেরিকার বিদেশ দফতরের তরফে বুধবার নিজ্জর খুনের তদন্তে ভারতের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানানো হয়েছে।
গত জুন মাসে খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘খলিস্তান টাইগার ফোর্স’ (কেটিএফ)-এর প্রধান তথা কানাডার সারের গুরু নানক শিখ গুরুদ্বার সাহিবের প্রধান নিজ্জরকে গুরুদ্বার চত্বরের মধ্যেই গুলি করে খুন করা হয়। সেই ঘটনার তদন্তে ভারতের গুপ্তচর সংস্থার ভূমিকা ছিল বলে কানাডার পার্লামেন্টের জরুরি অধিবেশনে সোমবার দাবি করেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রু়ডো। কানাডার তদন্তকারী সংস্থাগুলি এ বিষয়ে আরও বিশদে তদন্ত করছে বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর দাবি, বিষয়টি নিয়ে জি২০ শীর্ষ সম্মেলন চলাকালীন তাঁর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীরও কথা হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, ট্রুডোর ওই বিবৃতির পরেই কানাডার এক ভারতীয় এক কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়। সে দেশের বিদেশমন্ত্রী মেলানি জোলি জানান, ওই ব্যক্তি ‘র’-এর কানাডার প্রধান হিসাবে দায়িত্ব সামলাতেন। যদিও তাঁর নাম জানাননি মেলানি। ওই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার মোদী সরকার কানাডার এক শীর্ষ কূটনীতিককে পাঁচ দিনের মধ্যে দিল্লি ছাড়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, নিজ্জর খুনের ঘটনায় দায় অস্বীকার করে ভারত। ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংহতির বিরোধী শক্তিকে কানাডা মদত দিচ্ছে বলে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে অভিযোগ তোলা হয়।
১৯৭৭ সালে কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নেওয়া নিজ্জর কেটিএফের পাশাপাশি ভারতে নিষিদ্ধ খলিস্তানপন্থী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’ (এসএফজে)-এর সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। স্বাধীন এবং সার্বভৌম খলিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে এসএফজে সম্প্রতি অন্টারিও-সহ কানাডার কয়েকটি এলাকায় জমায়েত এবং গণভোটের ডাক দিয়েছে। অতীতে তারা ব্রিটেন এবং কানাডা়য় ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ, হাঙ্গামাও করেছে।
নিজ্জর হত্যা ঘিরে উত্তেজনার এই আবহে বুধবার কানাডায় বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা জারি করেছে সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বুধবার এক্স হ্যান্ডলে ওই সতর্কবার্তা প্রকাশ করেছেন। তাতে স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে, ‘‘কানাডার মাটিতে ভারতীয় নাগরিকেরা ভারত বিরোধী তৎপরতা এবং রাজনৈতিক প্ররোচনামূলক ঘৃণার জেরে হিংসার শিকার হতে পারেন।’’ ‘পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ভারত বিরোধী শক্তি ভারতীয় কূটনীতিক এবং ভারতীয় নাগরিকদের নিশানা করতে পারে’ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ভারতীয় নাগরিক এবং পড়ুয়াদের কানাডার ‘উত্তেজনাপূর্ণ’ এলাকাগুলি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের ওই সতর্কবার্তায়। নিজ্জর খুনের প্রসঙ্গ তুলে প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী তথা ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি’ (পিপিপি) প্রধান বিলাবল ভুট্টো জারদারি বুধবার ভারতকে ‘দুর্বৃত্ত রাষ্ট্র’ বলেছেন।