বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জামান। —ফাইল ছবি।
জনবিক্ষোভের জেরে শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথের পরেও বাংলাদেশের সেনা এখনও রাজপথ ছেড়ে শিবিরে (ক্যান্টনমেন্ট) ফেরেনি। যা নিয়ে দানা বেঁধেছে নানা জল্পনা। এই পরিস্থিতিতে সোমবার বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জামান জানালেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি তৎপরতা পুরোদমে শুরু হলেই শিবিরে ফিরবে সেনা।
জেনারেল ওয়াকার সোমবার বলেন, ‘‘খুব দ্রুত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। পুলিশ যখন আবার সুন্দর ভাবে তাদের কার্যকলাপ শুরু করবে, তখন আমরা সেনানিবাসে ফিরে যাব।’’ সেনাপ্রধান তাঁর এই বার্তার মাধ্যমে অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নাকচ করতে চেয়েছেন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন। সেনাপ্রধান সোমবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার উদ্দেশ্যে তৈরি অস্থায়ী ক্যাম্প পরিদর্শনের পরে বলেন, ‘‘দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। সেই পরিস্থিতি সামলাতে সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫ অগস্ট (হাসিনার ইস্তফা ও দেশত্যাগ) এবং তার পরবর্তী সময় আরও একটু ভিন্ন। এখানে অনেক ধরনের অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। পুলিশবাহিনীর উপরেও আক্রমণ হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনটি বড় মাপের সেনা অভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছে ভারতের পূর্ব প্রান্তের প্রতিবেশী দেশ। সেনার হাতে নিহত হতে দেখেছে দুই প্রেসিডেন্ট— শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে। খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ, আবু সাদাত মহম্মদ সায়েম, আবদুস সাত্তারের মতো প্রেসিডেন্টরা সেনার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারিয়েছেন। এ ছাড়া, গত সাড়ে পাঁচ দশকে একাধিক ছোট-বড় ব্যর্থ অভ্যুত্থানও হয়েছে সে দেশে। শেষ বার ২০০৭ সালে সরকার গঠনে হস্তক্ষেপ করেছিল বাংলাদেশ সেনা। যদিও রাষ্ট্রপুঞ্জের বিধি-নিষেধের কারণে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ সরাসরি ক্ষমতার চাবিকাঠি হাতে নেননি। এ বারও জেনারেল ওয়াকার ‘পর্দার আড়াল’ থেকেই সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।