প্রকাশ কারাট। —ছবি সিপিএমের ফেসবুক।
টানা ৪৯ মিনিটের বক্তৃতা। চোখা ইংরেজি উচ্চারণে সেই বক্তৃতা যখন শেষ করলেন সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য তথা প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, তখন প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনের শ্রোতার আসনে বসে থাকা এক প্রৌঢ় পাশের জনকে বলে উঠলেন, ‘‘এ কী! বাংলা নিয়ে তো কিছুই বললেন না কারাট! একটু তো বলা উচিত ছিল!’’ সেই প্রৌঢ়ের পরনে ছিল সবুজ গোলগলা গেঞ্জি আর ট্রাউজ়ারস। কাঁধে সিপিএম সুলভ ঝোলা ব্যাগ। নাম অলক শীল। বাড়ি উত্তর কলকাতার বাগবাজারে। তবে সিপিএমের অনেকের যুক্তি, আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে সবার বলার পাণ্ডিত্য থাকে না। কারাটের তা আছে।
কারাট কী বললেন?
বললেন, ইজ়রায়েল আর প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ। দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে বললেন, সিপিএম হামাসের হানার পক্ষে নয়। কিন্তু ইজ়রায়েল যে নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে তা নিন্দনীয়। হামাসের হামলা আর আমেরিকা ও অন্যান্য সহযোগী দেশগুলির পৃষ্ঠপোষকতায় ইজ়রায়েল যে ভাবে গাজাকে বছরের পর বছর ধরে খোলা জেলখানা বানিয়ে রেখেছে, সিপিএম তার বিরুদ্ধে। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানইয়াহুর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জুড়ে দেখাতে চাইলেন সিপিএমের এই তাত্ত্বিক নেতা। বললেন, নেতানইয়াহু যেমন মেরুকরণ করতেই প্যালেস্তাইনকে নিশানা করে চলেছেন, এখানেও তেমন সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট’ করা হয়েছে। প্রবণতা একই। বিজেপি সম্পর্কে আরও একটি নতুন শব্দ বললেন কারাট। এত দিন সিপিএম বলত, বিজেপি ‘ফাসিস্তসুলভ’ সরকার চালাচ্ছে। মঙ্গলবার কারাট বললেন, এটাই হল নব্য ফ্যাসিবাদ (নিও ফ্যাসিজম)।
কারাটের বক্তৃতার ৪৯ মিনিট ভাগ করলে দেখা যাবে, ৪৩ মিনিট তিনি বলেছেন ইজ়রায়েল ও প্যালেস্তাইন নিয়ে। বাকি ছ’মিনিট কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারকে নিয়ে। যদিও রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম তাঁর নাতিদীর্ঘ বক্তৃতায় বাংলাকে ছুঁয়ে গিয়েছেন। দলের ‘সবজান্তা’ নেতাদের এই বার্তাও দিয়েছেন, তরুণ প্রজন্মের কর্মীদের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। ‘বাচ্চা ছেলে’ বলে হেলাফেলা করা যাবে না।
১৭ অক্টোবর দিনটিকে সিপিএম পালন করে ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে। মঙ্গলবার রাজ্য সিপিএমের কর্মসূচিতে আলোচনার বিষয় ছিল, ‘কমিউনিস্ট ইস্তেহারের ১৭৫ বছর ও বর্তমান সময়।’ কলকাতার সেই কর্মসূচিতে মূল বক্তা বাংলা থেকে দূরেই থাকলেন।