ঢাকায় থানাগুলির পাহারায় সেনা। ছবি: রয়টর্স।
বাংলাদেশে পালাবদল ঘটেছে। নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবারই বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। তার পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে। শুক্রবার রাজধানী ঢাকাতে ২৯টি থানায় কাজ শুরু হল। ‘প্রথম আলো’তে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, টানা তিন দিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অধীনে থাকা ২৯টি থানায় কাজকর্ম শুরু হয়েছে। তবে থানাগুলির বাইরে রয়েছে সেনাবাহিনীর পাহারা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন পরে সরকার বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। সেই আন্দোলনের জেরে সোমবার বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তার পরই বোন রেহানাকে সঙ্গী করে দেশ ছাড়েন তিনি। হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকেই উত্তাল বাংলাদেশ। ঢাকা তো বটেই সেই রেশ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। সেই রাতেই ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে থানার পর থানায় হামলা চলেছে বলে অভিযোগ। চলেছে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করেন উর্দিধারীরা।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঢাকার থানাগুলি প্রায় অচল হয়ে পড়ে। প্রায় সব থানাই পুলিশশূন্য। শুধু থানা নয়, ঢাকার রাস্তায় পুলিশের দেখা মেলেনি। ভেঙে পড়েছিল পুলিশের জরুরি পরিষেবাও। বাংলাদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছিল, দেশের পুলিশি ব্যবস্থা চলছিল স্বল্প সংখ্যক লোকবলকে সঙ্গী করে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে পুলিশি পরিষেবার জরুরি হেল্পলাইন নম্বর ৯৯৯-তে ফোন করলেও পরিষেবা ঠিকঠাক মিলছে না বলে অভিযোগ।
তার মধ্যেই আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের সেনা। কিন্তু তার পরও থানাগুলির পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা পুলিশ কর্মবিরতির ডাক দেয়। তাদের দাবি, যত ক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, তত দিন কাজে যোগ দেবে না। জরুরি হেল্পলাইনগুলোতে ফোন করেও ‘উত্তর’ মেলেনি। কোনও সময় কেউ ফোন ধরলেও স্পষ্ট জানানো হচ্ছিল, পুলিশ নেই। তবে শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিকের পথে।
‘প্রথম আলো’য় প্রকাশ, শুক্রবার সকাল থেকেই গুলশান, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, হাজারিবাগ, কোতোয়ালি, চকবাজার-সহ ২৯টি থানায় পুলিশকর্মীদের আনাগোনা চোখে পড়ে। এক-দু’জন করে লোক আসছেনও থানায় অভিযোগ জানাতে। তবে এখনও পর্যন্ত ডিএমপি-র অধীনে থাকা ২১ থানাতে কাজকর্ম শুরু করা যায়নি। গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ‘প্রথম আলো’কে জানান, ৫ অগস্ট থেকে তাদের থানায় কোনও রকম হামলার ঘটনা ঘটেনি।
হাসিনার দেশ ছাড়ার পর থেকেই উন্মুক্ত জনতার একাংশের রোষ গিয়ে পড়ে ঢাকার থানাগুলিতে। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় বিভিন্ন থানায়। পুলিশকর্মীরা থানায় বসে কাজ করতেই ভয় পাচ্ছেন, এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছিল ‘প্রথম আলো’তে। তবে শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে। যে সব থানায় কম ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, সেই সব থানায় কাজ শুরু হয়েছে। তবে এখনও অনেক থানা রয়েছে, যেখানে কাজ করার মতো পরিস্থিতি নেই বলে খবর ‘প্রথম আলো’তে। সেই সব থানায় শুক্রবারও বন্ধ থাকল কাজকর্ম। পুলিশের দেখা মিলল না।