এক জন ক্রিকেট জগতের যুবা নায়ক। অন্য জন উত্তরপ্রদেশের বাঘা রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য, দেশের অন্যতম কনিষ্ঠ সাংসদ। তাঁদের বিয়ের সম্বন্ধ নিয়েই শোরগোল পড়েছে। কথা হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটার রিঙ্কু সিংহ এবং সমাজবাদী পার্টির মছলিশহর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ প্রিয়া সরোজের।
কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটার রিঙ্কু এখন ভারতের টি-টোয়েন্টি দলেরও নিয়মিত সদস্য। আইপিএলে নজর কাড়ার পর থেকে তিনি ক্রমশ এগিয়েছেন ২২ গজের লড়াইয়ে। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। অন্য দিকে, প্রিয়া আগ্রাসী রাজনীতির বাইশ গজে।
সম্প্রতি একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রিঙ্কু এবং প্রিয়া সম্পর্কে জড়িয়েছেন। দ্রুত এক হতে পারে তাঁদের চার হাত। এর পরেই একাধিক জল্পনা তৈরি হয়। হইচইও পড়ে।
যদিও এর কিছু পরেই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করেন প্রিয়ার বাবা তথা উত্তরপ্রদেশের বিধায়ক তুফানি সরোজ। তিনি জানান, রিঙ্কু এবং প্রিয়া প্রেম করছেন না। তাঁদের মধ্যে কোনও সম্পর্কও নেই। রিঙ্কুর পরিবারের পক্ষ থেকে কেবল বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছেন তাঁরা।
এক টিভি চ্যানেলে তুফানি স্পষ্ট করেছেন, ‘‘একটি কাজের জন্য তিরুঅনন্তপুরমে রয়েছে প্রিয়া। ওর বাগ্দানের খবর সম্পূর্ণ ভুল। দুই পরিবারের মধ্যে কথাবার্তা চলছে। তবে পাকাপাকি কোনও কথা হয়নি।’’
প্রিয়ার জামাইবাবু আলিগড়ের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। বিয়ের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গেই নাকি যোগাযোগ করা হয়েছিল রিঙ্কুর পরিবার থেকে। রিঙ্কুকে জামাই করার বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দিয়েই ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তুফানি।
আইপিএল থেকে নাম কুড়িয়ে প্রচারের আলোকবৃত্তে এসেছিলেন রিঙ্কু। তাঁর জীবনকাহিনি খুব একটা অজানা নয়। জনগণের মনে এখন কৌতূহল তৈরি হয়েছে তাঁর ‘প্রেমিকা’ প্রিয়াকে নিয়ে।
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী ভোলানাথ সরোজকে হারাতে কেরাকাটের বিধায়ক তুফানির কন্যা প্রিয়ার উপর বাজি ধরেছিল সমাজবাদী পার্টি।
বাজি যে ভুল ধরা হয়নি তা প্রমাণ হয় নির্বাচনী ফল বেরোতেই। বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থীকে ধরাশায়ী করেন প্রিয়া।
লোকসভা নির্বাচনে ভোলানাথকে ৩৫ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেছিলেন প্রিয়া। প্রমাণ করেছিলেন, রাজনীতি তাঁর রক্তে।
এর পরেই দেশের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম সাংসদ হিসাবে সংসদে প্রবেশ করেন প্রিয়া। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ২৫। উল্লেখ্য, প্রিয়ার বাবা তুফানিও তিন বারের সাংসদ ছিলেন।
১৯৯৮ সালের ২৩ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে জন্ম প্রিয়ার। বড় হয়ে রাজনীতিতে আসবেন, এমন ইচ্ছা কোনও দিন ছিল না তাঁর। সে কথা জানিয়েছেন প্রিয়া নিজেই। পেশায় আইনজীবী প্রিয়ার পরিবার বারাণসীরই বাসিন্দা। যদিও তাঁর পড়াশোনা দিল্লিতে।
নয়াদিল্লির এয়ার ফোর্স গোল্ডেন জুবিলি ইনস্টিটিউট থেকে পড়াশোনা করেছেন প্রিয়া। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর আইন নিয়ে পড়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিয়া বলেন, ‘‘আমি রাজনীতিতে পা দেব, এ কথা কল্পনাও করিনি। আইনে স্নাতক হওয়ার পর কোভিড-১৯ অতিমারি চলাকালীন বিচারক হওয়ার পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমনকি, যখন সমাজবাদী পার্টি প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করছিল, আমি তখন অনলাইনে ক্লাস করছিলাম।’’
২০২৪ সালের প্রিয়ার নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর নিজস্ব কোনও বাড়ি নেই। নিজের নামে কোনও গাড়িও নেই। মাত্র ৫ গ্রাম সোনার গয়না রয়েছে প্রিয়ার কাছে।
নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, প্রিয়ার হাতে থাকা মোট সম্পত্তির পরিমাণ ১১ লক্ষ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ১০ লক্ষ ১০ হাজার একটি ব্যাঙ্কে জমা রয়েছে। যদিও এর পর প্রায় ১০ মাস কেটে গিয়েছে। প্রিয়ার সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে বা কমেছে কি না, তা জানা যায়নি।
ছবি: সংগৃহীত।