সন্দেশখালিতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ছবি: সংগৃহীত।
এলাকার ‘বেতাজ বাতশা’ শেখ শাহজাহান ও তাঁর শাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরাকে দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস যেতেই তাঁর কাছে এই দাবিই তুললেন সন্দেশখালির মহিলারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘পাণ্ডা’দের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে ভবিষ্যতে অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়বে! সন্দেশখালির মহিলাদের বক্তব্য শোনার পর কড়া পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছেন বোস।
সন্দেশখালিকাণ্ড নিয়ে রাজ্য জুড়ে শোরগোল পড়তেই কেরল সফর কাটছাঁট করে সোমবার কলকাতায় ফিরে সন্দেশখালি গিয়েছেন বোস। তাঁকে কাছে পেয়ে এলাকার পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিতে থাকেন স্থানীয় মহিলারা। এক এক করে তাঁরা নিজেদের কথা বলেন বোসকে। কেউ জানান দিনের পর দিন কী ভাবে তাঁদের উপর অত্যাচার হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতার কথা। কেউ আবার জানান, কী ভাবে তাঁদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন শাহজাহান, শিব ও ধৃত উত্তম সর্দারেরা। এক মহিলার কথায়, ‘‘আপনারা এখন আছেন বলে আমরা নিজেদের কথা বলতে পারছি। কিন্তু আপনারা এখান থেকে চলে গেলেই আবার আগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। ওরা আরও অত্যাচার করবে আমাদের উপর। কিছু একটা করুন, যাতে ওরা গ্রেফতার হয়। আমরা ওদের কঠোর শাস্তি চাই। ফাঁসি চাই আমরা।’’
রাজ্যপালও সন্দেশখালির মহিলার বক্তব্য শোনেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি কথা দিচ্ছি, যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। আমার যা ক্ষমতা আছে, তা দিয়ে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’’
গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছিল সন্দেশখালিতে। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। তাঁর বাড়িতেই তল্লাশি অভিযানে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর থেকে পলাতক শাহজাহান। সেই মাসখানেক পর সম্প্রতি আবার উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। দফায় দফায় সেখানে অশান্তি, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। অশান্তির ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাঁদের এক জন তৃণমূলের উত্তর সর্দার। সন্দেশখালিকাণ্ডে নাম জড়ানোর পরেই উত্তমকে সাসপেন্ড করে শাসকদল। এর পরেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়াও গ্রেফতার করা হয়েছে বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহ ও সন্দেশখালির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক নিরাপদ সর্দারকে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যাঁরা আসল দোষী, তাঁদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। তাঁদের মধ্যেই এক জন হলেন শিবু। পুলিশ সূত্রের অবশ্য দাবি, শিবুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। যদিও এই দাবি মানতে নারাজ সন্দেশখালির মহিলারা। তাঁদের বক্তব্য, শিবুর বিরুদ্ধে পুলিশই কোনও অভিযোগ নিতে চায়নি।
সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে সোমবার মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজ্যপালের সফর নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যে যেখানে খুশি যেতেই পারেন। আমিও রাজ্য মহিলা কমিশনকে পাঠিয়েছিলাম। তারা রিপোর্ট দিয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, তাদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।’’
সোমবার রাজ্যপালের পাশাপাশি সন্দেশখালি গিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বের বিজেপি বিধায়কদেরও সেখানে যাওয়ার কথা। তাঁরা রওনাও দিয়েছিলেন। কিন্তু পথে তাঁদের আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিকে, দলের প্রাক্তন বিধায়কের গ্রেফতারির প্রতিবাদে সোমবার সন্দেশখালির দু’টি ব্লকে ১২ ঘণ্টা বন্ধেরও ডাক দিয়েছে সিপিএম।