West Bengal State Election Commission

হাই কোর্টের নির্দেশের ৪৮ ঘণ্টা পার, কেন্দ্রীয় বাহিনী চাইলেন না রাজীব! উল্টে রাজ্য, কমিশন সুপ্রিম কোর্টে

কলকাতা হাই কোর্টের বাহিনী-রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, কমিশন এসএলপি দায়ের করেছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ ০১:৪৫
Wide spread confusion whether State Govt. and Election Commission approached Supreme Court dgtl

বাহিনী প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশের পর ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। আদালতের নির্দেশ ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী চেয়ে আবেদন করতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। কিন্তু কমিশনের তরফে বাহিনীর ‘রিক্যুইজিশন’ এখনও পৌঁছয়নি কেন্দ্রের কাছে। অন্য দিকে, হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে চলে গিয়েছে কমিশন। শনি ও রবিবার সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ। ফলে শীর্ষ আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে কি না তা নিয়ে ধন্দ রয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে বিরোধীদের একটি অংশ আবার দাবি করছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রের কাছে বাহিনী-আর্জি না জানিয়ে আদালত অবমাননা করেছে কমিশন।

পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বে হিংসা দেখেছে রাজ্য। মৃত্যু হয়েছে একাধিক। এই প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েই পঞ্চায়েত ভোট করাতে হবে। শুক্রবার হাই কোর্ট এই রায় দেয়। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাহিনী চেয়ে কেন্দ্রের কাছে ‘রিক্যুইজিশন’ পাঠানোর কথা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের। নবান্ন সূত্রে খবর, এতেই আপত্তি রাজ্য সরকারের।

Advertisement

সূত্রের খবর, নবান্ন মনে করছে, কোথায় কত পুলিশ লাগবে, নির্বিঘ্নে ভোট করাতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত কী কী পদক্ষেপ করা দরকার, তা রাজ্যের কাছে জানতে চাইবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। রাজ্য সেই তথ্য দেবে কমিশনকে। রাজ্যের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্বাচনী নিরাপত্তার কাজ করবে কমিশন। অর্থাৎ, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্ত খুঁটিনাটি রাজ্য সরকারই কমিশনকে অবহিত করবে। এ ক্ষেত্রে হাই কোর্ট সরাসরি রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই বাহিনী চাইতে বলেছে কেন্দ্রের কাছে। আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে শীর্ষ আদালতে গিয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবারই নবান্নের তরফে ই-ফাইলিংয়ের তোড়জোড় শুরুর ইঙ্গিত মিলেছিল। একই ভাবে কমিশনও সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে। কমিশনের দফতর থেকে বেরোনোর সময় শনিবার কমিশনার রাজীব সিংহ বলেন, ‘‘আমরা এসএলপি ফাইল করেছি। সুপ্রিম কোর্ট অর্ডার দিক।’’ অর্থাৎ, হাই কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে কমিশন এবং রাজ্য সরকার।

অন্য দিকে, নবান্ন সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং তামিলনাড়ু থেকে বাহিনী আনার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

যদিও সরাসরি এই আইনি মারপ্যাঁচে না ঢুকতে চাইছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। সিপিএম নেতা শমীক লাহিড়ি বলছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে কমিশন আদালত অবমাননা করেছে কি না তা আইন বিশেষজ্ঞেরা বলতে পারবেন। কিন্তু হাই কোর্টের রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই কমিশনার বলেছিলেন যে, তাঁরা রায় মানবেন। কিন্তু শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী যখন বললেন, আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাব, তখনই রাজীব সিংহও বললেন, কমিশন সুপ্রিম কোর্টে যাবে। তাই এ বিষয় নিয়ে সমালোচনা করার যথেষ্ট জায়গা রয়েছে।’’

হাই কোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য যে সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে তা আঁচ করেই আগেভাগে ক্যাভিয়েট দাখিল করে রেখেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী। জনস্বার্থ মামলাকারী শুভেন্দুর আইনজীবী সূর্যনীল দাস বলেন, ‘‘রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে কলকাতা রায়ের প্রতিলিপি পাঠিয়েছিলাম। বৃহস্পতিবার রাত ৮:১৭ মিনিটে কমিশনকে রায়ের বিষয়ে জানানো হয়েছিল। সময়ের ওই হিসাব ধরলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় নির্দেশ কার্যকর না হলে আদালত অবমাননা হওয়া উচিত। আর সুপ্রিম কোর্টে আমরা আগাম ক্যাভিয়েট দাখিল করে রেখেছি। ফলে রাজ্য বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন শীর্ষ আদালতে এসএলপি করেছে কি না জানা নেই। আমরা এখন পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আগামী সোমবার পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’

আর এক জনস্বার্থ মামলাকারী আবু হাসেম খান চৌধুরীর আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরাও ক্যাভিয়েট দাখিল করে রেখেছি সুপ্রিম কোর্টে। নির্বাচন কমিশনের এসএলপি নিয়ে আমাদের কিছু জানা নেই। এখনও পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি। এটা আদালত অবমাননার শামিল। আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement