Babul Supriyo

গায়কে-গায়কে তালে তাল ঠোকাঠুকি, সমে তুলেও ‘শ্যেন’ ইন্দ্রনীলকে দান ছেড়েই দিলেন সুপ্রিয় বাবুল

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থেকে রাজ্যে মন্ত্রী হওয়া বাবুল সুপ্রিয় তথ্যপ্রযুক্তির পাশাপাশি পর্যটন দফতরেরও দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তাঁর অধীনস্থ দফতর থেকে বাদ যেতে চলেছে পর্যটন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:৩৮
(বাঁ দিকে) ইন্দ্রনীল সেন। বাবুল সুপ্রিয় (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ইন্দ্রনীল সেন। বাবুল সুপ্রিয় (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

মন্ত্রিসভার রদবদলে পর্যটন দফতর হাতছাড়া হতে চলেছে বাবুল সুপ্রিয়ের। এমনটা যে হতে পারে, তা আগেই জানা গিয়েছিল। বাস্তবেও তেমনই ঘটল। তবে প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বাবুল নিজেই সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছিলেন, তিনি আর পর্যটন দফতরে থাকতে চাইছেন না। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী তাতে অসম্মতি জানাননি।

Advertisement

বাবুল পর্যটনে না থাকলে ওই দফতর কার হাতে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তা এখনও স্পষ্ট নয়। নবান্নের বিজ্ঞপ্তিতেই তা পরিষ্কার হবে। যদি ওই দফতর ইন্দ্রনীলের হাতে যায়, তা হলে বিষয়টিতে আবার নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাবুল তাঁর ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি দু’টি বিষয় উল্লেখ করেছেন। এক, শূকরের সঙ্গে লড়তে যেও না। কারণ, যুদ্ধে জিতলেও গায়ে পাঁক মাখতে হবে। দুই, নির্বোধের সঙ্গে তর্ক কোরো না। কারণ, প্রথমে সে তোমায় তার স্তরে টেনে নামাবে। তার পরে তার নীচতার অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে তোমায় হারিয়ে দেবে।

তার পরেই বাবুল দান ছাড়ার (ওয়াকওভার) কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘‘জীবনের কিছু কিছু যুদ্ধে ওয়াক ওভার দিতে হয়। যেখানে তুমি হেরো লোকটাকে জিতিয়ে দিয়ে নির্জনতা এবং মর্যাদার দিকে হেঁটে চলে যেতে পারো।’’ অনেকেই মনে করছেন, এই পোস্টের মাধ্যমে রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে বিঁধেছেন বাবুল। একই সঙ্গে বুঝিয়েছেন, তিনি ‘দান’ ছেড়ে দিলেন। তার পরে একটি ভিডিয়ো রেকর্ডিংয়ে অবশ্য তিনি বলেছেন, ‘‘আমার এই ফেসবুক পোস্ট নিয়ে নানা ফোন আসছে। এটুকুই বলব, আমার মা কোভিডে মারা গিয়েছিলেন। আমি যে সোসাইটিতে থাকি, সেখানে আমি একটা পাখির বাগান করেছি। সোসাইটির অনুমতি নিয়েই। সেটা নিয়ে জেনারেল বডি মিটিংয়ে অনেক প্রশ্ন ওঠে। অনেকে বলেন, আমি ক্ষমতা জাহির করছি।’’ বাবুল বলেছেন, ওই বৈঠকে কী চলছিল, সেটা তিনি শোনেন। একটা দৃষ্টিকটু লড়াই হচ্ছিল। সেটা তিনি শুনেছিলেন এবং তার ভিডিয়ো রেকর্ডিংও দেখেছেন। সেই সূত্রেই তাঁর ওই পোস্ট। বাবুলের কথায়, ‘‘আপনারা কে কী ভাবছেন, জানি না। কী জন্য ওই পোস্ট, সেটা জানাতেই এই কথাগুলো বললাম।’’

তবে বাবুল যা-ই বলুন, তাঁকে এবং ইন্দ্রনীলকে নিয়ে শাসকদল এবং প্রশাসনের অন্দরে আলোচনা এবং জল্পনা থামছে না। ঘটনাচক্রে, বাবুল এবং ইন্দ্রনীল দু’জনেই পেশাদার গায়ক। বাবুল ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। ইন্দ্রনীলের সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক চিরকালই ‘মধুর’। তবে তা কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর দু’জনে প্রকাশ্যেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন বিধানসভার অলিন্দে।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, পর্যটনে ইন্দ্রনীলের ‘শ্যেনদৃষ্টি’র সামনে বাবুলের কাজে অসুবিধা হচ্ছিল। যার জেরে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বিধানসভার অলিন্দে বাবুল প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেন, ইন্দ্রনীল সরকারি কাজ আটকে দিচ্ছেন। যার জবাবে ইন্দ্রনীল বলেন, বাবুল যেন গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান। অসমর্থিত সূত্রের খবর, তার আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পর্যটন দফতর নিয়ে বাবুলকে মৃদু তিরস্কারও করেছিলেন। তারই রেশ এসে পড়ে বৈঠকের শেষে। বাবুল শিবিরের অভিযোগ, পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হিসেবে ইন্দ্রনীল সমস্ত ফাইল মন্ত্রীকে পাঠাচ্ছিলেন না। যদিও ইন্দ্রনীলের শিবির সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের বরং বক্তব্য, আসল বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং জানেন। সেই জন্যই বাবুল যখন প্রায় সর্বসমক্ষে ইন্দ্রনীলকে বলছেন, কেন তিনি সরকারি কাজ আটকে দিচ্ছেন, তখন ইন্দ্রনীল তাঁকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাতে। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘ইন্দ্রনীল বেশি কথা না বলে দু’টি সরকারি প্রকল্পের নাম তিন বার বলেছিলেন বাবুলকে। দিদিকে বলো, দিদিকে বলো এবং সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী।’’

তার আগে জুলাইয়ের শেষে রাজ্য সরকারে কর্মরত আমলা নন্দিনী চক্রবর্তীর জায়গায় ইন্দ্রনীলকে রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত বাবুলের অগোচরে নেওয়া হয়েছিল, এমন নয়। বাবুলও তখন বলেছিলেন, ‘‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আমার বহু পুরনো বন্ধু এবং মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ইন্দ্রনীলদা পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আমি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাব, এই ব্যাপারে আমার অনুরোধটি অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে গ্রহণ করার জন্য।’’ অর্থাৎ, বাবুল বুঝিয়েছিলেন তাঁর অনুরোধেই ইন্দ্রনীলকে ওই পদে বসিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু মাসখানেকের মধ্যেই সেই ‘সুর’ কেটে যায়। যার ফল মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর বাবুল-ইন্দ্রনীল প্রকাশ্যে বাদানুবাদ। ওই ঘটনার পরে ‘আহত’ বাবুল গোটা বিষয়টি তৃণমূলের শীর্ষ স্তরে জানান বলেও খবর। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির বদল হয়নি। শেষ পর্যন্ত কিছু দিন আগে বাবুল মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়ে তাঁকে বলেন, তিনি আর পর্যটন দফতরে থাকতে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রী তাতে ‘অসম্মতি’ জানাননি বলেই খবর। একটি সূত্রের দাবি, বাবুলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও। ওই বৈঠকেই ঠিক হয়, বাবুল অতঃপর শুধু তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের মন্ত্রী থাকবেন।

প্রসঙ্গত, বাবুল রাজনীতিতে এসেছিলেন বিজেপির হয়ে। আসানসোল থেকে জিতে কেন্দ্রে প্রতিমন্ত্রীও হন। দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভায় রদবদল করলে বাদ পড়েন বাবুল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানান তিনি। তৃণমূলে যাবেন না বলেই ঘোষণা ছিল। কিন্তু ২০২১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে গিয়ে তাঁর হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা নেন বাবুল। কিছু অপেক্ষার পরে বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে জিতে মন্ত্রী হন তিনি। তবে ওই আসনে প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের চেয়ে অনেকটাই ব্যবধান কমে গিয়েছিল তৃণমূলের।

তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, বাবুলের সঙ্গে দলের অনেকের সম্পর্কও তেমন ‘মসৃণ’ নয়। নিজের বিধানসভা এলাকা বালিগঞ্জের অন্তর্গত ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীদের সঙ্গেও তাঁর বিবাদ বেধেছিল সম্প্রতি।

আরও পড়ুন
Advertisement