এক বৈঠকেই সব বলে গেলেন অমিত। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সুকান্ত মজুমদার বিজেপি রাজ্য সভাপতি হয়েছেন আট মাস আগে। তার পরে তিনি নতুন কমিটি গড়লে তা নিয়ে ক্ষোভবিক্ষোভ রয়েই গিয়েছে বিজেপির অন্দরে। অন্য দিকে, সংগঠনে শুভেন্দু অধিকারীর গুরুত্ব কতটা থাকবে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন শোনা যায় গেরুয়া শিবিরে। তবে অমিত শাহের বাংলা সফরের শেষে এ সব প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। দু’দিনের সফরে সুকান্ত ও শুভেন্দুকে সর্বক্ষণের সঙ্গী বানিয়ে যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গিয়েছেন শাহ। একই সঙ্গে বাংলায় বিজেপির পরিচালনার দায়িত্ব কাদের উপরে রাখতে চাইছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শাহ। অন্তত রাজ্যের পদ্মশিবির সেই বার্তাই পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার দু’টি সরকারি কর্মসূচি ছিল শাহের। প্রথমে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ এবং পরে হরিদাসপুরে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সংক্রান্ত কর্মসূচি। এর পরে অমিত চলে যান শিলিগুড়ির জনসভায়। শিলিগুড়িতেই রাত্রিবাসের পরে শুক্রবার সকালে হেলিকপ্টারে যান কোচবিহারের তিনবিঘায়। সেখানেও ছিল বিএসএফের কর্মসূচি। কলকাতায় ফিরে শাহ যান কাশীপুরে মৃত দলীয় নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার বাড়িতে। সব সময়েই সুকান্ত-শুভেন্দু ছিলেন অমিতের সঙ্গী। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে অমিতের গাড়িতেই কাশীপুরে আসেন শুভেন্দু। এর পরে নিউটাউনের দলীয় বৈঠক শেষে ভিক্টোরিয়ার অনুষ্ঠান ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে নৈশভোজ। সব সময়েই অমিতের সঙ্গে ছিলেন রাজ্য সভাপতি এবং বিরোধী দলনেতা। রাজ্য বিজেপির নেতারা বলছেন, অমিতের সফরই বলে দিচ্ছে আগামী দিনে সুকান্ত-শুভেন্দু জুটিই হবে রাজ্য বিজেপির মুখ।
শুক্রবার রাতে সৌরভের বাড়ি থেকে ফিরে নিউটাউনের হোটেলে আর এক প্রস্ত বৈঠকে বসেন শাহ। বিজেপির অনেকে বলছেন, সেটাই ছিল অমিতের ‘আসল’ বৈঠক। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলা বৈঠকের শেষে দিল্লি রওনা হন অমিত। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘণ্টা দেড়েকের সেই বৈঠকে ছিলেন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ। সেই বৈঠকে আমন্ত্রিতরাই যে আগামী দিনে রাজ্য বিজেপি পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকবেন, মোটামুটি সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন অমিত। সুকান্ত, শুভেন্দু ছাড়াও ছিলেন রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক তথা সর্বভারতীয় আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী এবং অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়।
সম্প্রতি দলের কোনও প্রবীণ কেন্দ্রীয় নেতাকে রাজ্যের ‘অভিভাবক’ হিসেবে চেয়েছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি কারও নাম না-নিলেও মালবীয়কে যে তাঁর ‘অপছন্দ’, সে ইঙ্গিত দিলীপের বক্তব্যে ছিল। সুকান্তর ‘অভিজ্ঞতা কম’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন দিলীপ। আবার রাজ্য নেতৃত্বকে ‘অপরিণত’ বলে আক্রমণ শানান বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। শাহের ‘আসল’ বৈঠকের পরে অবশ্য এ নিয়ে বিজেপি নেতাদের আর কোনও সন্দেহ নেই যে, সেসব বিষয় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। সুকান্তের পাশাপাশি মালবীয়তেই ভরসা রাখতে চান শাহ। আপাতত পর্যবেক্ষক রদবদলের কোনও সম্ভাবনা নেই।
অমিতভাকে সরানোর দাবি রয়েছে বিজেপির অন্দরে। সে দাবি প্রকাশ্যেও এসেছে। আড়াল থেকে তাঁর নির্দেশেই বিজেপি চলছে বলে অভিযোগে অমিতাভর বিরুদ্ধে কুৎসামূলক পোস্টারও দেখা গিয়েছে কলকাতায়। কিন্তু বিজেপি সূত্রে খবর, অমিতাভর ভূমিকায় সিলমোহর দিয়েছেন অমিত। সেই সঙ্গে নিজেদের মতো কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন টিম সুকান্তকে। পাশাপাশি, শুক্রবারের ‘আসল’ বৈঠকে জগন্নাথের উপস্থিতি নিয়েও আলোচনা চলছে। কারণ, রাজ্য বিজেপিতে পাঁচ জন সাধারণ সম্পাদক। জগন্নাথ ছাড়া বাকি চারজনই জনপ্রতিনিধি। দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাত এবং দুই বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল এবং দীপক বর্মন। জগন্নাথ ছাড়া কাউকেই ওই বৈঠকে ডাকা হয়নি। এর থেকেই গেরুয়া শিবির মনে করছে শাহের ‘পঞ্চরত্ন সভা’য় জায়গা পেয়েছেন সুকান্ত, শুভেন্দু, মালবীয়, অমিতাভ ও জগন্নাথ। এঁরাই আপাতত রাজ্য বিজেপি পরিচালনা করবেন। তবে অনেক বলছেন, বিজেপিতে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী হয় না। আগামী দিনে কে উঠে আসবেন আর কে আড়ালে চলে যাবেন, তা এখন থেকে বলা ঠিক নয়।