WB Panchayat Election 2023

শুক্রে ভাঙড় যেতে পারেন রাজ্যপাল, পঞ্চায়েত-অশান্তি নিয়ে বার্তা আনন্দ বোসের

পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন যে ঘিরে অশান্তির অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে এ বার বিবৃতি দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। জানালেন, ভোটের জয় নির্ভর করে গণনার উপর। মৃতদেহের সংখ্যার উপর নির্ভর করে নয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৩ ০০:১৮
photo of CV Ananda Bose

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে অশান্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়। শুক্রবার সেই ভাঙড়ে যেতে পারেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজভবন সূত্রে খবর, শুক্রবার নিজের পূর্ব নির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করেছেন রাজ্যপাল। তবে ভাঙড়ে তিনি যাবেন কি না, তা স্পষ্ট ভাবে রাজভবনের তরফে জানানো হয়নি। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবার রাতেই একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যের সাম্প্রতিক অশান্তি প্রসঙ্গে রাজ্যপাল সেখানে লিখেছেন, ‘‘শয়তানের খেলা শেষ হওয়া উচিত। বন্ধ হবে। পশ্চিমবঙ্গে শেষের শুরু হবে।’’

এর আগে রামনবমীর সময় রাজ্যে অশান্তির ঘটনায় ‘তৎপর’ হতে দেখা গিয়েছিল রাজ্যপাল বোসকে। সেই সময় উত্তরবঙ্গ সফর কাটছাঁট করে তিনি তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে এসেছিলেন। তার পর গিয়েছিলেন হুগলির রিষড়ায়। সেখানকার অশান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের বিবৃতির পাশাপাশি, শুক্রবার নিজের যাবতীয় কর্মসূচি যে ভাবে বাতিল করেছেন রাজ্যপাল, তাতে তিনি ভাঙড়ে যেতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। শেষবেলাতেও রক্ত ঝরেছে রাজ্যে, প্রাণও গিয়েছে। বিরোধীদের দাবি এমনটাই। গত মঙ্গলবার থেকেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় অশান্ত। ইটবৃষ্টি, বোমাবাজি, গুলি— বিরোধীদের অভিযোগে উঠে এসেছে সবই। বৃহস্পতিবারও ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে ২ জনের মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াতে এক জনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ যদিও সরকারি ভাবে এ সব নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। মনোনয়ন-পর্বে একের পর এক অশান্তির ঘটনায় রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবারও তিনি আরও এক বার আঙুল তোলেন রাজ্যপালের দিকে। শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্যপালের যখন করার ছিল, তখন কিছু করেননি।’’ রাজ্য নির্বাচন কমিশনার পদে রাজীব সিংহের নিয়োগও রাজ্যপাল আটকাতে পারতেন বলে দাবি করে সরব হয়েছেন শুভেন্দু। বিরোধী দলনেতার পাশাপাশি রাজ্যপালকে কটাক্ষ করেছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও। বৃহস্পতিবারই তিনি বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালকোথায় গিয়েছেন আমি জানি না। শুনলাম তিনি আউট অফ স্টেশন। আর রাজ্যে এই পরিস্থিতি চলছে।’’

এ সবের পরেই বৃহস্পতিবার রাতেই অশান্তি নিয়ে রাজ্যপালের বিবৃতি প্রকাশ্যে এল। সেখানে বিবৃতিতে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলায় মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এতে আমি স্তম্ভিত। গুন্ডাদের হাতে আক্রান্ত সংবাদমাধ্যমও। নির্বাচনে জয় নির্ভর করে ভোটের সংখ্যার উপর। মৃতদেহের সংখ্যার উপর নির্ভর করে নয়।’’ এর পরেই রাজ্যপালের মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদমাধ্যম আক্রান্ত। তার মানে গণতন্ত্র আক্রান্ত। সাধারণ মানুষ আক্রান্ত। দেশের সংবিধান আক্রান্ত। নতুন প্রজন্মও আক্রান্ত। শয়তানের এই খেলা বন্ধ হওয়া উচিত।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘গণতন্ত্রে মানুষই প্রভু। নির্ভয়ে নিজের ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে তাঁদের। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে হিংসার কোনও জায়গা নেই।’’ হিংসার রাস্তা অবিলম্বে বন্ধ করার বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল। পাশাপাশি, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করার কথাও বলেছেন তিনি। বিবৃতিতে কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেছেন রাজ্যপাল। শান্তিপূর্ণ ভাবে যাতে নির্বাচন সম্পন্ন করা হয়, সে ব্যাপারে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে সদর্থক ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মনোনয়ন-পর্বে অশান্তি নিয়ে আগেও সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল। গত শনিবারই রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও রকম গন্ডগোল বরদাস্ত করা হবে না।’’ তার পরও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মনোনয়ন ঘিরে তাণ্ডব চলেছে। বৃহস্পতিবার আবারও বিবৃতি দিয়ে সরব হলেন রাজ্যপাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement