mukul roy

তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল-শ্যালক সৃজন, বিড়ম্বনায় বিজেপি নেতা, উল্লসিত শাসক শিবির

বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুলের পরিবারেই এ বার ‘উলটপুরাণ’। নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে পদ্মশিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান সৃজনের।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:২৩
হাতে জোড়াফুল পতাকা তুলে নিয়ে মুকুলের বিড়ম্বনা বাড়ালেন সৃজন। গ্রাফিক: নিরুপম পাল।

হাতে জোড়াফুল পতাকা তুলে নিয়ে মুকুলের বিড়ম্বনা বাড়ালেন সৃজন। গ্রাফিক: নিরুপম পাল।

বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিলেন মুকুল রায়ের শ্যালক সৃজন রায় ওরফে সাজা। বুধবার তৃণমূল ভবনে এসে দলে যোগ দেন তিনি। সেখানে তাঁকে তৃণমূলে স্বাগত জানান রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। বছরখানেক আগে সাজা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুলের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় তৃণমূলে চলে আসায় মুকুল খানিক ‘বিড়ম্বিত’ বলেই মনে করছেন তাঁর সহকর্মীরা। স্বভাবতই ঘটনাপ্রবাহে ‘উল্লসিত’ শাসক তৃণমূল।

ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যাওয়ার হিড়িক পড়েছে রাজ্যে। কিন্তু দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুকুলের পরিবারেই এ বার ‘উলটপুরাণ’। বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগে পদ্মশিবির ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান সৃজনের। প্রসঙ্গত, রেলে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ২ কোটি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত সৃজন। মুকুল রেলমন্ত্রী থাকাকালীনই ৫০-৬০ জনের কাছ থেকে তিনি ওই টাকা তুলেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই মামলায় ২০১৮ সালে তাঁকে গ্রেফতারও করেছিল রাজ্য পুলিশ। প্রায় ১ বছর জেলে থাকতে হয় তাঁকে। পরে জামিনে ছাড়া পেয়ে যদিও সমস্ত অভিযোগই অস্বীকার করেন তিনি। তার পর গত বছর বিজেপি-তে যোগ দেন।

Advertisement

তৃণমূলে ফিরে আসার কারণ জানতে চাইলে সৃজন বলেন, ‘‘পরিবারে অশান্তি হয়। বড় ভাইয়ের সঙ্গে ছোট ভাইয়ের অশান্তি হয়। তাতে কিছু দিনের জন্য কোনও এক ভাই পরিবারের বাইরে থাকে। কিন্তু মনোমালিন্য মিটে গেলে সবাই ঘরে ফিরে আসে। আমার সঙ্গেও তেমনই হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে এ সব বলতে পারব না। দলের অন্দরের ব্যাপার। ভুল বোঝাবুঝির জন্যই যেতে হয়েছিল আমাকে।’’ হঠাৎ বিজেপি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? সৃজন বলেন, ‘‘বিজেপি করা যাবে না। ভারতবর্ষ একটা এত বড় দেশ। এখানে নানা মত, নানা পথ। ধর্মের রাজনীতি ভারতে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না। কারণ, দেশের সংবিধানই ধর্মনিরপেক্ষতার উপর দাঁড়িয়ে।’’ তিনি তৃণমূলে ফিরে এলেও মুকুলের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কে কোনও ‘প্রভাব’ পড়বে না বলে দাবি করেন সৃজন। দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার সময় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছিলেন সৃজন। কিন্তু এমন কোনও মন্তব্য করেননি বলে বুধবার দাবি করেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘আমি এমন কোনও মন্তব্য করেছি বলে ভিডিয়ো দেখান! তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।’’

বিজেপি-র অন্দরের অবশ্য খবর, সম্প্রতি মুকুল-সৃজন সম্পর্কে একটা ‘শৈত্য’ এসেছিল। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘সৃজনের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা আছে। সেটা থাকা অন্যায়ও নয়। কিন্তু মুকুল’দা সে ভাবে কখনও ওঁকে সামনে এগিয়ে দেননি। বরং উনি অনেক বেশি নজর দিয়েছিলেন হাপুনের (মুকুল-তনয় বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়) রাজনৈতিক কেরিয়ারের উপর। সেটাও সৃজনের ক্ষোভের কারণ হয়ে থাকতে পারে। তবে সৃজন আমাদের দল ছেড়ে তৃণমূলে ফেরায় মুকুল’দা যে খানিক বিড়ম্বনায় পড়লেন, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’’

প্রসঙ্গত, সোমবার কালনায় দলীয় সভায় ‘জায়গা ছেড়ে দেওয়া’র কথা বলতে শোনা গিয়েছিল মুকুলকে। তৃণমূল-ত্যাগী শুভেন্দু অধিকারীকে পাশে নিয়ে মুকুল বলেছিলেন, ‘‘জায়গা ছেডে় দেওয়ার পালা শুরু হয়েছে। আমি জায়গা ছেড়ে দিচ্ছি। জায়গা ছাড়তে জানাটাও একটা আর্ট। কখন জায়গা ছাড়তে হবে, সেটা শিখতে হবে।’’ মুকুলের ওই বক্তব্য নিয়ে স্বভাবতই জল্পনা শুরু হয়েছিল। যে তিনি কি আবার ‘ঘর ওয়াপসি’-র কথা ভাবছেন! পাশাপাশিই, মুকুল ইদানীং রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিশেষ কোনও ‘আক্রমণাত্মক’ মন্তব্য থেকে বিরত থাকছেন। সংখ্যালঘুদের মধ্যে তৃণমূলের আধিপত্য কার্যত মেনে নিয়ে তিনি সম্প্রতি বলেছেন, ‘‘পরীক্ষাটা ১০০-য় দেব। যদি ৩০ বাদও দিই, তা হলেও ৭০-এ ৫১ পেতেই হবে।’’ নিজে হিন্দু হলেও সব ধর্মের মানুষকেই সম্মান করেন বলেও মন্তব্য করেন মুকুল। তবে মুকুলের ঘনিষ্ঠমহলের দাবি, ‘সরে যাওয়া’র কোনও চিন্তাভাবনা তাঁর মাথায় নেই। তবে রক্তে শর্করা রোগ এবং বয়স তাঁকে খানিকটা কাবু করেছে। সেই কারণেই তিনি আগের মতো অত বেশি সময় দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তিত। ওই বক্তব্য সেই সূত্রেই। এর মধ্যে ‘অন্য কিছু’ খোঁজা অনুচিত বলেই দাবি মুকুল-ঘনিষ্ঠদের।

Advertisement
আরও পড়ুন