WBJDA

কিঞ্জলের কথার রেশ টেনে যুযুধান জুনিয়র ডাক্তারদের দুই সংগঠন, উঠল ধর্ষকের ‘পক্ষ নেওয়া’র অভিযোগ

জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কে অভিযুক্তকে ফাঁসাল? কেন ফাঁসাল? এর উদ্দেশ্য কী?’’ এই প্রশ্নে সিবিআইয়েরই বিষয়টি খোলসা করা উচিত বলেও দাবি করেন তিনি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৪ ১১:০৫
(বাঁ দিকে) জুনিয়র ডক্টর্‌‌স ফ্রন্টের নেতা কিঞ্জল নন্দ। জুনিয়র ডক্টর্‌‌স অ্যাসোসিয়েশনের অতনু বিশ্বাস (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) জুনিয়র ডক্টর্‌‌স ফ্রন্টের নেতা কিঞ্জল নন্দ। জুনিয়র ডক্টর্‌‌স অ্যাসোসিয়েশনের অতনু বিশ্বাস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

জুনিয়র ডাক্তার কিঞ্জল নন্দের সোমবারের বক্তব্যের রেশ টেনে প্রতিক্রিয়া জানাল নবগঠিত জুনিয়র ডক্টর্‌স অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউবিজেডিএ)। এ বারেও নিশানায় আরজি কর আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ডব্লিউবিজেডিএফ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ধর্ষকের ‘সুরে সুর মিলিয়ে’ ধর্ষকেরই পক্ষ নিচ্ছেন কিঞ্জলরা!

Advertisement

সোমবার কিঞ্জলের বক্তব্যের পরেই সমাজমাধ্যমে নিজেদের পাতা থেকে একটি ভিডিয়োবার্তায় প্রতিক্রিয়া জানায় ডব্লিউবিজেডিএ। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অতনু বিশ্বাস বলেন, ‘‘আরজি করে নির্যাতিতার ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত শিয়ালদহ কোর্ট চত্বরে জানিয়েছে যে, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের নেতা কিঞ্জল নন্দ প্রশ্ন তুলেছেন কে ফাঁসাচ্ছে, কাকে ফাঁসাচ্ছে, কেন ফাঁসাচ্ছে? আমরা তাঁকে প্রশ্ন করতে চাই যে, তাঁরা যে এত দিন মানুষকে বলে এসেছেন মানুষ কার পক্ষে— ধর্ষকের পক্ষে না নির্যাতিতার জন্য বিচারের পক্ষে, তা হলে সেই সংগঠনের নেতারা এখন ধর্ষকদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন কেন? ডব্লিউবিজেডিএফ আবারও নিজেদের তঞ্চকতা এবং দ্বিচারিতা প্রকাশ করল। তীব্র ধিক্কার জানাই।’’ তাদের আরও দাবি, নির্যাতিতার বাবা-মা’ও সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ডব্লিউবিজেডিএ-র প্রশ্ন, সিবিআই যখন বলছে অভিযুক্তই আরজি কর-কাণ্ডে একমাত্র দোষী, তা হলে জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্টের তা মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে কথা বলা কি পরোক্ষ ভাবে ধর্ষণকেই সমর্থন করা নয়? এর পরেই কিঞ্জলের শ্বশুরের প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে জুনিয়র ডাক্তারদের পাল্টা সংগঠন। তাদের দাবি, কিঞ্জলের শ্বশুরের বিরুদ্ধেই শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে। তাই তাঁর মুখে ধর্ষকের সমর্থন শুনতে পাওয়া আশ্চর্যের নয়।

প্রসঙ্গত, সোমবার আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের মামলায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে পেশ করা হয়েছিল শিয়ালদহ আদালতে। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আদালত থেকে তাঁকে বার করার সময়েই সংবাদমাধ্যম এবং উপস্থিত সকলের সামনে চিৎকার করে ওঠেন ধৃত। প্রিজ়ন ভ্যান থেকে বলেন, ‘‘আসলদের বাঁচানোর জন্য আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। সরকারই ফাঁসাচ্ছে। ডিপার্টমেন্ট আমাকে চুপ থাকতে বলেছে। এটা কি ন্যায়? ভারতীয় সংবিধানের ন্যায়?’’ তাঁর ওই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই জুনিয়র ডক্টর্‌স ফ্রন্টের অন্যতম মুখ কিঞ্জল নন্দ প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কে তাঁকে ফাঁসাল? কেন ফাঁসাল? এর উদ্দেশ্য কী?’’ এই প্রশ্নে সিবিআইয়েরই পুরো বিষয়টি খোলসা করা উচিত বলেও দাবি করেন কিঞ্জল। সিবিআইয়ের তদন্তের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘‘প্রায় তিন মাস হতে চলল। এই ঘটনায় এক জন ছাড়া কেউ গ্রেফতার হননি। আমরা প্রত্যেকেই জানি, যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছে, তা কোনও এক জনের পক্ষে ঘটানো সম্ভব নয়। তা হলে সিবিআই এত দিন ধরে কী করছে? কেন গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না?’’ উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডে সিবিআই যে প্রাথমিক চার্জশিট জমা দিয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত এক জনই। এর আগে গত শনিবারও সাংবাদিক বৈঠক করে তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারেরা। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট, ফরেন্সিক ল্যাবে নমুনা পাঠানোর সময়ের ব্যবধান তুলে ধরে জুনিয়র ডাক্তারেরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এই বিষয়গুলি সিবিআই স্পষ্ট করছে না।

সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ শিয়ালদহ আদালতে ধর্ষণ এবং খুনের একাধিক ধারায় ধৃত সিভিকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ঘটনার ৮৭ দিন এবং সিবিআইয়ের চার্জশিট পেশের ২৮ দিনের মাথায় ওই মামলায় চার্জ গঠন সম্পন্ন হয়েছে। তার পর শুরু হবে বিচারপ্রক্রিয়া। আগামী ১১ নভেম্বর থেকে ওই মামলায় শুনানি শুরু হতে চলেছে। শুনানি চলবে রোজ।

আরও পড়ুন
Advertisement