রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তি এবং হিংসা ঠেকাতে রাজভবনে ‘পিস রুম’ (শান্তি কক্ষ) খোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এ বার কলকাতা থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত ‘পিস ট্রেন’ (শান্তির ট্রেন) চালানোর জন্য রেলমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শাসকদল তৃণমূল অবশ্য রাজ্যপালের সমালোচনা করে জানিয়েছে, আরও কিছু পাওয়ার আশায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘তোষণ’ করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল।
রবিবার রেলের এক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল। সেখানেই তিনি এই পিস ট্রেন চালানোর জন্য রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবকে অনুরোধ জানান। কলকাতা থেকে ট্রেনটি জলপাইগুড়ি হয়ে দার্জিলিং যাবে বলে জানান তিনি। এর পাশাপাশি তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “রাজ্যের প্রধান দুই শত্রু হিংসা এবং দুর্নীতি।” রাজ্যপালের মন্তব্যের সমালোচনা করে তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘‘রেলের মঞ্চ থেকে বাংলা-বিরোধী মন্তব্য করেছেন রাজ্যপাল। তাঁর জানা উচিত, বিজেপি শাসনাধীন রাজ্যগুলির তুলনায় বাংলা অনেক ভাল অবস্থায় আছে।” এই প্রসঙ্গে রাজ্যের প্রাক্তন রাজ্যপাল এবং দেশের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আরও কিছু পাওয়ার আশায় ধনখড়ের মতোই নরেন্দ্র মোদীকে তুষ্ট করতে চাইছেন রাজ্যপাল।”
গত কয়েক মাস ধরেই রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজভবনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে নবান্নের। কিছু দিন আগে রাজভবনে ‘দুর্নীতিদমন সেল’ চালু করা নিয়ে বলতে গিয়ে রাজ্যপাল বোসের প্রতি ‘শ্রদ্ধা’ রেখেই মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন যে, রাজ্য সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এ নিয়ে নিজের ‘অসন্তোষ’ ব্যক্ত করতে গিয়ে বোসের পূর্বসূরি জগদীপ ধনখড়ের প্রসঙ্গও টানেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘ধনখড়ের সঙ্গেও বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু উনি এ রকম করেননি।’’
পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাতের আবহ দেখা গিয়েছিল। ভাঙড়, ক্যানিংয়ের মতো হিংসা উপদ্রুত অঞ্চলে নিজেই ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। রাজভবনে খুলেছিলেন ‘পিস রুম’। রাজভবনের তরফে সেই সময় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বলা হয়েছিল, ভোট সংক্রান্ত অশান্তি ঠেকাতে রাজভবনে অভিযোগ জানানো যাবে। সেই অভিযোগ পেয়ে রাজ্যপালের তরফে জানানো হবে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। তারা সেই মতো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ‘হিংসা’র দায়ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের উপরেই চাপিয়েছিলেন রাজ্যপাল। রাজ্য-রাজভবন এই ‘মধুর’ সম্পর্কে আবহেই বোসের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।