বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। —ফাইল চিত্র।
শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ না করা হলেও আগের তুলনায় আরও একটু ভাল আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, বুদ্ধদেবের সিআরপি ২০-র নীচে নেমেছে। অর্থাৎ, সংক্রমণের হার আরও একটু কমার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে।
তবে নতুন করে কোনও সংক্রমণ যাতে নতুন করে বুদ্ধদেবকে কাবু করতে না পারে, তার জন্য সতর্ক থাকতে চাইছেন চিকিৎসকেরা। বাড়ি ফিরেও কড়া বিধিনিষেধের মধ্যেই থাকতে হবে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় বাড়িতে খুব ঘনিষ্ঠজন ছাড়া অন্য কাউকে বুদ্ধদেবের সঙ্গে দেখা না করার পরামর্শ দিতে পারেন চিকিৎসকেরা। সে ক্ষেত্রে হয়তো এখনই সকলে বুদ্ধদেবের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না সকলে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির ‘বাইপ্যাপ সাপোর্ট’ও ক্রমশ মানিয়ে নিচ্ছেন বুদ্ধদেব, যা স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষণ বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। শনিবার বেশ কিছু সময়ের জন্য তাঁকে বাড়ির ‘বাইপ্যাপ সাপার্টে’ই রাখা হয়েছিল। রাতে অবশ্য হাসপাতালের ‘বাইপ্যাপ সাপার্টে’ রাখা হয়।
রবিবার সকালে হাসপাতালের তরফে প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, এখনও পর্যন্ত নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে থাকলেও, চিকিৎসক এবং তাঁকে দেখতে আসা মানুষদের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বৈঠকে বসবেন মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যেরা। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ওই বৈঠকেই বুদ্ধদেবের বাড়ি ফেরা নিয়ে পাকা সিদ্ধান্ত হবে।
গত ২৯ জুলাই ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে গুরুতর সংক্রমণ নিয়ে আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় বুদ্ধদেবকে। ওই দিন রাতেই তাঁকে দেওয়া হয় ‘ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে’। ৪৮ ঘণ্টা ভেন্টিলেশনে থাকার পর তাঁকে আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় ‘নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে’। তবে সাত দিন হাসপাতালে কাটানোর পর বুদ্ধদেবের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে অনেকটাই। সংক্রমণের কারণে তাঁকে কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। স্যালাইনের মাধ্যমে তা চলছিল এত দিন। এক সপ্তাহ পর শনিবার তাঁর অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজ শেষ হয়েছে। তার পরেই খুলে ফেলা হয়েছে স্যালাইনের নলও।
বস্তুত, শরীরে একাধিক নল লাগানো নিয়ে বার বার আপত্তি জানিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে খেতেও হচ্ছে নলের মাধ্যমেই। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘রাইল'স টিউব’। স্যালাইনের নল খোলা হলেও এখনও রাইল'স টিউবের মাধ্যমেই খাওয়াদাওয়া করানো হচ্ছে। সদ্য সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পর যে খুব একটা খেতে পারছেন, এমন নয়। তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা অন্যতম চিকিৎসক সৌতিক পাণ্ডা বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত অতটা খিদে ওঁর নেই। দীর্ঘ অসুস্থতা, এত ওষুধপত্র, অ্যান্টিবায়োটিক, ৪৮ ঘণ্টার জন্য ভেন্টিলেশন— সব মিলিয়ে এখনও ওঁর শরীর অনেকটা ভগ্ন। এই অবস্থায় ওঁর অতটা খিদে নেই। নিজেও মুখে অতটা খেতে চাইছেন না। তাই রাইলস টিউবের উপর ভরসা করেই পুষ্টি দেওয়া হচ্ছে আর ‘সোয়ালো অ্যাসেসমেন্ট’টা জারি রাখা হয়েছে।’’