Four Years Honours Course

জাতীয় শিক্ষানীতি রাজ্য না মানলেও চলতি বছর থেকেই চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম

শিক্ষামন্ত্রী জানান, পড়ুয়াদের সুবিধার জন্যই স্নাতকে চার বছরের পাঠক্রম চালু করছে রাজ্য। বিভ্রান্তি এড়াতেই আপাতত অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২৩ ১২:৩৩
WB education dept said state will follow four years honours course from 2023-24 academic season

চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম রাজ্যে। ফাইল চিত্র।

রাজ্যে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রমে ছাড়পত্র দিল শিক্ষা দফতর। চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই নয়া ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। বুধবার শিক্ষা দফতরের তরফে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকেই রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়ে যাবে। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের সুবিধার কথা ভেবেই স্নাতক স্তরে চার বছরের পাঠক্রম চালু করছে রাজ্য। তাঁর কথায়, “রাজ্যের প্রায় ৭ লক্ষ ছাত্রছাত্রী, যাঁরা এই বছর স্নাতক স্তরে ভর্তি হতে চলেছেন, তাঁদের সুবিধার কথা ভেবে আমরা ৪ বছরের পঠনপাঠন চালু করতে চলেছি। এতে তাঁদের সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে এবং একই সঙ্গে রাজ্যের বাইরে পড়তে চলে যাওয়ার প্রবণতা কমবে।”

Advertisement

তবে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না এ বারেও। এই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পড়ুয়াদের মধ্যে বিভ্রান্তি এড়াতেই কলেজগুলিকে আলাদা আলাদা ভাবে ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনলাইনে অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তির প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এই মুহূর্তে আমরা কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তি না করে কলেজগুলিকে আলাদা আলাদা ভর্তির কথা বলেছি, যাতে বিভ্রান্তি না ছড়ায়। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের যে কেন্দ্রীয় অনলাইন ভর্তি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, সেখানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং পরিমার্জনের কাজ আমরা জরুরি ভিত্তিতে চালাব, যাতে এই ব্যবস্থাটিকেও আমরা এই বছরই চালু করতে পারি।”

তবে একটি টুইটবার্তায় শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, রাজ্য জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণ করছে না। রাজ্য যে পৃথক শিক্ষানীতি গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছিল, তার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম নিয়ে বাধ্যবাধকতার বিষয়টি উল্লেখ করে ব্রাত্য বলেন, “চার বছরের ডিগ্রি কোর্স চালু না করলে আমাদের ৭ লক্ষ ছাত্রছাত্রীরা সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারতেন না। এ ক্ষেত্রে তাঁদের বাইরের রাজ্যে গিয়ে পড়ার প্রবণতা বেড়ে যেত।” ঘটনাচক্রে জাতীয় শিক্ষানীতিতেও চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রস্তাবিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে ‘অতিরিক্ত কেন্দ্রীকরণ’-সহ একাধিক বিষয়গুলির যে বিরোধিতা করা হচ্ছে, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।

গত শুক্রবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন, এই দু’টি বিষয় নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা বাকি রয়েছে তাঁর। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য সামনের সপ্তাহ পর্যন্ত সময় চেয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে বলেও জানান তিনি। কারণ দু’টি বিধি চালুর ক্ষেত্রেই পরিকাঠামোগত বিষয় জড়িয়ে ছিল। পড়ুয়াদের ভবিষ্যতের বিষয়টিও নজরে রাখা হয়। ব্রাত্য বলেন, ‘‘চার বছরের স্নাতকোত্তর পাঠক্রম এবং কেন্দ্রীয় অভিন্ন পোর্টালের মাধ্যমে ভর্তির পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শেষ ধাপের আলোচনা বাকি। সবুজ সঙ্কেত পেলেই জানাব।’’ তার পর বুধবারই নিজেদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিল শিক্ষা দফতর।

জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে দেশের বেশ কিছু রাজ্যে ইতিমধ্যে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু হয়েছে। রাজ্যের সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ও জাতীয় শিক্ষানীতি মেনে চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করেছে। বাকি রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালু করা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। ব্রাত্য আগেই জানিয়েছিলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হবে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কী ভাবে কার্যকর করা হতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি মত দেবে। সেই মতো কমিটি গঠন করে রাজ্যের শিক্ষা দফতর। ৬ সদস্যের এই কমিটির প্রধান করা হয় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসকে। স্থির হয়, কমিটি রিপোর্ট দিলে তার ভিত্তিতে চার বছরের পাঠক্রম নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, কমিটি চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম চালুর পক্ষেই মত দেয়।

অভিন্ন কেন্দ্রীয় পোর্টালের মাধ্যমে কলেজে ভর্তির বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সঙ্কেতের উপর নির্ভর করছিল। সূত্রের খবর, এই কেন্দ্রীয় পোর্টালের মহড়া চলছে। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের কাউন্সেলিং যে ভাবে হয়, সেই ভাবেই এই পোর্টালের মাধ্যমে পড়ুয়া ভর্তি নেওয়া হবে। এই পোর্টালে টাকা জমা দিয়ে রাজ্যে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হতে পারবেন পড়ুয়ারা। গত বছর থেকেই এই পোর্টাল চালুর ভাবনা ছিল শিক্ষা দফতরের। পরিকাঠামোর অভাবে হয়নি।

আরও পড়ুন
Advertisement