সুপ্রিম কোর্ট। —ফাইল চিত্র।
ডিসেম্বরের গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথ্য রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয়ে যাবে। আজ আচার্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আরও ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হল। একই সঙ্গে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যে ফের রাজ্যপাল ও রাজ্যের মতান্তর দেখা দিচ্ছে, তারও ইঙ্গিত মিলল। সুপ্রিম কোর্ট এ নিয়ে রাজ্যপালকে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছে।
আজ সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যপালের তরফে কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল আর বেঙ্কটরমণি জানান, ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নামে রাজ্যপাল ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছেন। আরও ১৭টি বিশ্ববিদ্যালয় বাকি। তার জন্য আরও কিছু সময় দেওয়া হোক। রাজ্যের তরফে আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ১৭ সংখ্যাটা শুনতে ভাল। কিন্তু ৩৪টি-র মধ্যে মাত্র ১৭টি হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে তিন সপ্তাহ সময় দিয়েছিল। এই নিয়ে মোট আট সপ্তাহ সময় লেগে গেল। বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূইয়াঁর বেঞ্চের কাছে বাড়তি সময় চেয়ে তিনি বলেন, “মোট ১৭টি নামে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও ১৭টি নাম বাকি। কিছু মতান্তর রয়েছে। আমি মুখবন্ধ খামে আদালতের কাছে তা জানাব। তবে আমার মতে, আমি রাজ্যপাল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে কিছু মধ্যস্থতা করতে পারি। এর মধ্যে জটিল মানসিক আদানপ্রদান জড়িত। আশা করি, আমরা সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে পারব।” বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “আমাদের অনুরোধ, আমাদের সময় বাঁচান। যখনই মতপার্থক্য হবে, তখন আমাদের আরও সময় ব্যয় করতে হবে। তার থেকে আপনি নিজের পদ কাজে লাগিয়ে যত বেশি সম্ভব নাম চূড়ান্ত করে নিন। ছ’সপ্তাহের বদলে তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে বিচারপতিরা বলেন, তাঁদের মনোভাব যেন রাজ্যপালকে জানানো হয়। তিন সপ্তাহ সময় প্রসঙ্গে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের আদেশ। মুখ্যমন্ত্রী জানেন। কোনও অসুবিধা নেই। ঠিক আছে।”
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মতবিরোধের জেরে সুপ্রিম কোর্ট গত জুলাই মাসে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উদয় উমেশ ললিতের নেতৃত্বে 'সার্চ-কাম- সিলেকশন' কমিটি গঠন করে দেয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, ওই কমিটি উপাচার্যদের নানের বাছাই তালিকা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠাবে। মুখ্যমন্ত্রী নিজের পছন্দ অনুযায়ী নাম সাজিয়ে রাজ্যপালের কাছে পাঠাবেন। রাজ্যপাল সিলমোহর দেবেন। মতান্তর হলে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করবে। মনু সিঙ্ঘভি আজ জানান, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কমিটির তরফে যা সুপারিশ এসেছে, তিনি সব রাজ্যপালকে পাঠিয়েছেন।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে বিবাদের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ বিষয়ে খসড়া নিয়ম তৈরি করেছে। তাতে রাজ্যপাল তথ্য আচার্যকে তিন সদস্যের বাছাই কমিটি গড়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেখানে রাজ্যপালের মনোনীত সদস্যই চেয়ারপার্সন হবেন। আজ সিপিএমের পলিটব্যুরো এই নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি তুলে বলেছে, যখন কিছু বিরোক্ট শাসিত রাজ্যে রাজ্যপালের ইচ্ছেমতো উপাচার্য নিয়োগ হচ্ছে, তখন এই ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে রাজ্যপালকে। এতে কেন্দ্র ইচ্ছেমতো উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে।