Kolkata Police

অপরাধে খানিক লাগাম, ভাঙড়ে এক বছর পার কলকাতা পুলিশের

গত বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের পথ চলা শুরু হয়। পাশাপাশি, সেখানে আলাদা ট্র্যাফিক গার্ডও তৈরি করা হয়।

Advertisement
সামসুল হুদা
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১৯
এখন সেখানে হিংসার ঘটনা অনেকটাই কমেছে বলে পুলিশের দাবি।

এখন সেখানে হিংসার ঘটনা অনেকটাই কমেছে বলে পুলিশের দাবি। —প্রতীকী চিত্র।

বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা বাদ দিলে মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভাবেই এক বছর পূর্ণ করল কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশন। এক সময়ে যেখানে প্রায় প্রতিদিনই বোমা, গুলির শব্দ শুনে মানুষের দিন কাটত, এখন সেখানে হিংসার ঘটনা অনেকটাই কমেছে বলে পুলিশের দাবি।

Advertisement

২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইএসএফ-তৃণমূলের সংঘর্ষে মৃত্যু হয়েছিল উভয় পক্ষের সাত জনের। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাঙড়কে কলকাতা পুলিশের আওতাধীন করার কথা ঘোষণা করেন। সেই মতো বারুইপুর পুলিশ জেলার ভাঙড় ও কাশীপুর থানা ভেঙে কলকাতা পুলিশের আটটি থানা তৈরি করা হয় (চারটি থানা আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করা হলেও বাকি চারটি থানা চলছে খাতায়-কলমে)। গত বছরের ৮ জানুয়ারি থেকে কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের পথ চলা শুরু হয়। পাশাপাশি, সেখানে আলাদা ট্র্যাফিক গার্ডও তৈরি করা হয়।

দায়িত্ব নেওয়ার পরে ভাঙড়ে লোকসভা নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করাই ছিল কলকাতা পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সেই নির্বাচন
রক্তপাত ছাড়াই শান্তিতে মিটে যায়। যদিও গত বছরের মে মাসে উত্তর কাশীপুর থানা এলাকার কাঁঠালিয়া গ্রামে পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে এক ভাই অন্য ভাইকে কুপিয়ে খুন করে। ২২ অক্টোবর ভাঙড় থানার শাঁকশহর বাজারে নিজের চায়ের দোকানেই খুন হন মালিক। ২৭ অক্টোবর চন্দনেশ্বর থানা এলাকায় ঘরের ভিতর থেকে এক বৃদ্ধের রক্তাক্ত এবং তাঁর স্ত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আবার জুন মাসে প্রাণগঞ্জ বাজারে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছিল এক জনের। শাঁকশহর বাজারে খুনের ঘটনা ছাড়া প্রতিটি ঘটনারই তদন্তে নেমে পুলিশ অভিযুক্তদের দ্রুত চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে।

কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশন জানিয়েছে, অধিকাংশ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ফলে অপরাধীরাও এখন তুলনায় বেশি সতর্ক। দুষ্কৃতীদের আলাদা তথ্যপঞ্জি তৈরি করা হয়েছে। তাদের উপরে কড়া নজরদারি চালানোর জন্য আলাদা অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে।
রাজনৈতিক হিংসা বন্ধ করতে সব পক্ষের মতামত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রতিটি থানায় পদস্থ কর্তারা ২৪ ঘণ্টা ডিউটি করছেন। থানা এলাকা ছোট ছোট জ়োনে ভাগ করে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। প্রত্যন্ত এলাকায় মোটরবাইকে চলছে টহল।

পুলিশের দাবি, থানায় কোনও অভিযোগ জমা পড়লে রাজনৈতিক রং না দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এলাকায় নানা বিষয়ে
সচেতনতার প্রচার এবং জনসংযোগ গড়ে তোলায় জোর দিয়েছে পুলিশ। বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করার চেষ্টাও চলছে। উত্তর কাশীপুর থানার ওসি অমিত চট্টোপাধ্যায় কচুয়া হাইস্কুলে গত কয়েক মাস ধরে বিজ্ঞান পড়ানোর পাশাপাশি ইংরেজিরও ক্লাস নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি বাল্যবিবাহ, নারী পাচার-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করছেন এলাকার বাসিন্দাদের।

ভাঙড়ের চারটি থানা মিলিয়ে আট জন ইনস্পেক্টর, ৯৬ জন অফিসার ও ২১৬ জন কর্মী গোটা ডিভিশনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। ট্র্যাফিক ব্যবস্থাও ঢেলে সাজানো হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব রাস্তায় গাড়ির গতি মাপার যন্ত্র, সিগন্যাল পোস্ট, স্পিড ব্রেকার বসানো হয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ভাঙড়ের আইনশৃঙ্খলার উন্নতির জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা সব রকম ভাবে
চেষ্টা করছি, যাতে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে। মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে পুলিশ বদ্ধপরিকর।’’

এক বছর পূর্তি উপলক্ষে বুধবার সকালে উপ-নগরপালের দফতরে পতাকা উত্তোলন ও প্যারেড হয়। পরে পোলেরহাট থানায়
চক্ষু পরীক্ষা শিবিরের আয়োজন করা হয়। দুপুরে ভাঙড় ট্র্যাফিক গার্ডের তরফে মহা ভোজেরও আয়োজন করা হয়েছিল।

Advertisement
আরও পড়ুন