মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
নিজের নম্বর বাড়াতে হবে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে জানাতে হবে তিনি কী বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু করেছেন নিজের এলাকায়। ফলে তৃণমূল বিধায়কদের জন্য তৈরি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ পর্যবসিত হয়েছে আত্মপ্রচারের মঞ্চে। কেউ কেউ আবার আত্মসংযোগ করার জন্য দৈনিক ‘গুড মর্নিং’ এবং ‘গুড নাইট’ও পাঠাতে শুরু করেছেন, যা নিয়ে ঘোরতর ‘অসন্তুষ্ট’ শাসকদলের শীর্ষনেতৃত্ব। বিধায়কদের কড়া বার্তা পাঠানো হয়েছে— এ সব চলবে না! ওই নির্দেশের পরেই বিধায়কদের ‘হাবিজাবি’ পোস্ট আপাতত বন্ধ হয়েছে।
গত ২ ডিসেম্বর বিধানসভার নৌসর আলি কক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল পরিষদীয় দলের জন্য একটি হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করতে নির্দেশ দেন। ওই দিনই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস গ্রুপ তৈরি করে বিধায়কদের সংযুক্ত করার কাজ শুরু করেন। কিন্তু গ্রুপ তৈরির পর থেকেই দেখা যাচ্ছে, বিধায়করা সেখানে নিজেদের দিনভরের রাজনৈতিক কর্মসূচির ছবি এবং বক্তব্য পোস্ট করতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ নিয়মিত সকালে এবং রাত্রে ‘গুড মর্নিং’ এবং ‘গুড নাইট’-এর ছবিও পোস্ট করছেন। কয়েক দিন বিষয়টি লক্ষ করার পর বিধায়কদের কাছে কড়া বার্তা পাঠিয়েছেন গ্রুপের সদস্য পরিষদীয় দলের শীর্ষনেতারা। স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, কোনও বিধায়ক নিজের খুশি মতো ওই গ্রুপে পোস্ট করবেন না। কারণ, গ্রুপটি তৈরি হয়েছে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর নির্দেশে। যেখানে শুধুমাত্র দলের নির্দেশ দেওয়া এবং তা গ্রহণ করার কাজ করবে পরিষদীয় দল।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বর্তমান সমীকরণ অনুযায়ীই পরিষদীয় দলের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপটি তৈরি হয়েছে। সেই সমীকরণেই তার দায়িত্ব বর্তেছিল অরূপের উপর। গ্রুপের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি মেম্বার্স’। সম্মিলিত ভাবে গ্রুপটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন অরূপ, পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, বিধায়কদের এ হেন পোস্ট করার বিষয়টি প্রথম থেকেই নজরে আসে শীর্ষ নেতাদের। তার পরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ওই হোয়াট্অ্যাপ গ্রুপেই ‘কড়া বার্তা’ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশের পাশাপাশিই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দল যে ভাবে বিধায়কদের নির্দেশ দেবে, সে ভাবেই চলতে হবে তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তৈরি হওয়া এই গ্রুপে কোনও ‘অবাঞ্ছিত’ বিষয় পোস্ট করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, পরিষদীয় দলের ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছেন তৃণমূলের প্রতীকে নির্বাচিত ২১৬ জন বিধায়ক। তা ছাড়াও বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করা ছয় বিধায়ককেও জায়গা দেওয়া হয়েছে গ্রুপে।
বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশন শুরুর পরেই পরিষদীয় দলের বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বিধায়কদের দলীয় শৃঙ্খলার পাঠ পড়িয়েছিলেন। বৈঠকে মমতা নির্দেশ দিয়েছিলেন, কেউ দলীয় শৃঙ্খলার উর্ধ্বে নন। সব বিধায়ককে দলের নীতি মেনে চলতে হবে। দলবিরোধী কাজ করলে পড়তে হবে শো-কজের মুখে। কোনও নেতা বা বিধায়ককে তিন বার শো-কজ করা হলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে বিধায়কদের কাছে সঠিক সময়ে দলীয় নির্দেশ পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু সেই লক্ষ্য থেকে ভ্রষ্ট হয়েছেন অধিকাংশ দলীয় বিধায়ক। তৃণমূল পরিষদীয় দলের এক প্রবীণ সদস্যের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যে হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছে, সেখানে নিজের ইচ্ছা মতো হাবিজাবি পোস্ট করা যায় নাকি! বিধায়কদের কখনওই সেটা করা উচিত হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী দলীয় শৃঙ্খলার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে বিধায়কদের এক সুতোয় বাঁধতে ওই গ্রুপটি তৈরি করতে বলেছিলেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সেটা দেখভাল করার দায়িত্বও দিয়েছিলেন। কোনও বিধায়ক যদি নেত্রীর উদ্দেশ্য বুঝতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে তাঁদের কড়া ভাষায় তা বুঝিয়ে দেওয়াই আমাদের মতো প্রবীণ নেতাদের কর্তব্য। সেটাই করা হয়েছে।’’