বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে রক্তাক্ত হয়েছে বাংলা। এই পরিস্থিতিতে ভোট সন্ত্রাসের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বাংলায় চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দল পাঠাচ্ছেন বিজেপির দিল্লি নেতৃত্ব। এর পাল্টা এ বার বিজেপি শাসিত মণিপুরে হিংসাদীর্ণ এলাকায় চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল তৃণমূল। এই দলে থাকছেন, তৃণমূলের চার সাংসদ— ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষদস্তিদার এবং দোলা সেন। শুক্রবার মণিপুরে যাচ্ছে তৃণমূলের এই চার সদস্যের সংসদীয় দল। শুক্রবার এই সিদ্ধান্তের কথা টুইট করে জানিয়েছে তৃণমূল। মঙ্গলবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনা। তার ঠিক আগের দিন এ রাজ্যে যুযুধান দুই দলের এ হেন পদক্ষেপ রাজনীতির ময়দানে নতুন মাত্রা যোগ করল।
A four member fact-finding delegation of MPs from @AITCofficial will visit Manipur on July 14. Members of Parliament @derekobrienmp @KBanerjee_aitc @kakoligdastidar @Dolasen7 will reach out to those affected and provide some healing comfort for a ‘DOUBLE ENGINE’ State that the…
— All India Trinamool Congress (@AITCofficial) July 10, 2023
শনিবার রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে। প্রাণহানি, রক্তপাত, সংঘর্ষ, বোমাবাজির ঘটনায় তপ্ত হয়েছে বাংলা। নির্বাচনী অশান্তি নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হিংসাদীর্ণ এলাকায় গিয়ে নিজে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ভোটের দিনও বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। নির্বাচনের পরের দিনই রবিবার দিল্লি গিয়েছেন রাজ্যপাল। দিল্লি রওনা হওয়ার আগে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘তাজা বাতাস নিতে যাচ্ছি।’’ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা। ভোটপর্বে অশান্তির আবহে রাজ্যপাল বোসের সঙ্গে শাহের সাক্ষাতের জল্পনার মধ্যেই বাংলায় চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে বিজেপি। যা এই পর্বে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে। বিজেপির এ হেন পদক্ষেপের পাল্টা মণিপুরে অশান্ত এলাকা পরিদর্শনে তথ্যানুসন্ধান কমিটি গড়ল বাংলার শাসকদল। যা ঘিরে দুই দলের সংঘাত আরও তীব্র হতে চলেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সোমবার টুইটারে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘১৪ জুলাই তৃণমূলের চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দল মণিপুর যাবে। দলে থাকবেন ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং দোলা সেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করবেন তাঁরা।’’ এর পরেই বিজেপিকে কটাক্ষ করে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, গত তিন মাস ধরে বিজেপি সরকার যে ভাবে অবহেলা করেছে, তাতে ‘ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যে’ তৃণমূলের সংসদীয় দল স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি করবে। মণিপুরে অশান্তি নিয়ে প্রথম থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা। মণিপুরে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশও করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। মণিপুরে হিংসা নিয়ে বিজেপিকে আক্রমণ শানিয়েছে জোড়াফুল। এ বার পদ্মশাসিত রাজ্যে বিজেপির কায়দায় তথ্যানুসন্ধান দল পাঠাচ্ছে তারা।
অতীতে রাজ্যে একাধিক তথ্যানুসন্ধান দল পাঠিয়েছিলেন দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব। এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাংলায় সন্ত্রাসের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তথ্যানুসন্ধান কমিটি গড়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। চার সদস্যের দলটি এসে ‘সন্ত্রাস’ বিধ্বস্ত এলাকাগুলি ঘুরে দেখবে। তবে কবে তারা রাজ্যে আসবে, তা এখনও জানা যায়নি। এই সিদ্ধান্তের জন্য নড্ডাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তারই পাল্টা মণিপুরে দল পাঠাচ্ছে তৃণমূল।
গত দু’মাস ঘরে মণিপুরে গোষ্ঠীসংঘর্ষে একশোরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে দাবি। অশান্তির মধ্যেই সে রাজ্যে গিয়েছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু তার পরও পরিস্থিতির বদল ঘটেনি। বিজেপি শাসিত মণিপুরে অশান্তি নিয়ে সরগরম জাতীয় রাজনীতি। সে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসনের দাবি তুলেছে বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব, সেই প্রশ্নও তুলেছে বিরোধীরা। মণিপুর নিয়ে দিল্লিতে সর্বদল বৈঠক করেছিলেন শাহ। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এখনও এই নিয়ে নীরব প্রধানমন্ত্রী। সম্প্রতি মণিপুরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। এ বার সে রাজ্যে যাচ্ছে তৃণমূলের সংসদীয় দল।