Abhishek Banerjee

অভিষেককে আবার সমন ইডির, দিল্লিতে ঘেরাওয়ের কর্মসূচির সময়েই আবার তলব তৃণমূল সাংসদকে!

এর আগেও বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কো অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকের দিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল অভিষেককে। সেই বৈঠকে কমিটির সদস্য হিসাবে থাকার কথা ছিল অভিষেকের। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে পারেননি।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০২
সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার সমন পাঠাল ইডি। এ বারও তাঁর পূর্বনির্ধারিত রাজনৈতিক কর্মসূচির সময়েই। আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর বাংলার পাওনা চেয়ে দিল্লিতে ঘেরাও কর্মসূচির ঘোষণা করেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। কর্মসূচি চলাকালীন অভিষেকেরও দিল্লিতে থাকার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবারই এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে অভিষেক জানিয়েছেন, ইডি তাঁকে সেই সময়েই তলব করেছে। আগামী ৩ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার সময়ে সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলা হয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস মামলায় অভিষেকের বাবা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ওই সপ্তাহেই ডেকে পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

অভিষেক বৃহস্পতিবার এক্সে নাম না-করে আক্রমণ করেছেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। তিনি লিখেছেন, ‘‘ঠিক যখন বাংলার পাওনা চেয়ে আমাদের দিল্লিতে যাওয়ার কথা, সেই সময়েই তলব করা হল আমাকে। অতএব, বোঝা যাচ্ছে কারা আসলে ভীত এবং সন্ত্রস্ত। কারা ভয়ে কাঁপছে!’’

এর আগে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কো অর্ডিনেশন কমিটির প্রথম বৈঠকের দিন ডেকে পাঠানো হয়েছিল অভিষেককে। কমিটির সদস্য হিসাবে দিল্লিতে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠকে না গিয়ে ইডির সমনে সাড়া দিয়ে সল্টলেকে ইডির দফতরে হাজিরা দেন অভিষেক। দিল্লিতে তার চেয়ার ফাঁকা রেখে বৈঠক করেন ‘ইন্ডিয়া’র কো অর্ডিনেশন কমিটির অন্য সদস্যেরা। এ বারও দিল্লিতে তৃণমূলের ঘেরাও কর্মসূচির সময়েই ডেকে পাঠানো হল তাঁকে। অভিষেক সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে লিখেছেন, আগের বার তিনি তাঁর কর্তব্য পালন করেছিলেন।


এই নিয়ে বেশ কয়েক বার ইডি ডেকে পাঠাল অভিষেককে। এর মধ্যে এক বার ইডির সমনে সাড়া দিল্লিতে হাজির হয়েছিলেন তিনি। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলের ‘নবজোয়ার যাত্রা’র সময়েও তাঁকে ডেকে পাঠানো হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। কিন্তু প্রচারে ব্যস্ত থাকায় অভিষেক জানিয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে ওই সময় প্রচার ছেড়ে ইডির দফতরে যাওয়া সম্ভব নয়। ভোট শেষ হওয়ার পর ইডি ডাকলে তিনি যাবেন বলে জানান। সেই মতো সেপ্টেম্বরের শুরুতে অভিষেককে ডাকা হয়। কিন্তু এ বারও তাঁর বৈঠক ছিল। অভিষেক অবশ্য কথা রাখেন। বৈঠকে না-গিয়ে ইডির দফতরে যান এবং বেরিয়ে বলেন, ‘‘এই দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের নিট ফল শুধু শূন্য নয় মাইনাস টু। তবে আমাকে আবার ডাকলে আবার আসবে।’’ তার পর এক মাসও কাটেনি। তার মধ্যেই আবার সমন এসে পৌঁছল অভিষেকের কাছে।

অভিষেককে এ ভাবে বার বার তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচির সময়েই ইডির ডেকে পাঠানো নিয়ে বৃহস্পতিবার সরব হয়েছে তৃণমূলও। নিজেদের এক্স হ্যান্ডলে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে তৃণমূল। তারা লিখেছে, ‘‘বিজেপি আর কত নীচে নামবে? প্রথমে তোমরা বাংলার মানুষের প্রাপ্য অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের নিপীড়ন করবে। আর এখন যখন বাংলার মানুষ তাঁদের অধিকারের দাবিতে আওয়াজ তুলছে, তখন তাদেরও চুপ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ তৃণমূল আরও লিখেছে, ‘‘বিজেপি তাদের খাঁচায় ভরা টিয়া ইডিকে কাজে লাগিয়ে আবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে তলব করেছে আগামী ৩ অক্টোবর, যে দিন দিল্লিতে দলের ঘেরাও কর্মসূচি হওয়ার কথা।’’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শাসনে বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র স্রেফ ভস্মে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছে তৃণমূল। তারা লিখেছে, ‘‘এমন ঘটনা চোখের সামনে দেখাও লজ্জার।’’

পরে তৃণমূল অন্য একটি এক্স (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে। সেখানে লেখা হয়, ‘‘ওরা ভয় পেয়েছে।’’ তৃণমূল লিখেছে, ‘‘এখনও দিল্লিতে পা-ই পড়েনি আমাদের, আর এর মধ্যেই ভয় পেয়েছে ওরা।’’

প্রসঙ্গত, বাংলার প্রাপ্য বকেয়া টাকার দাবিতে আগামী ২ এবং ৩ অক্টোবর দিল্লিতে ধর্না কর্মসূচির ঘোষণা করেছে তৃণমূল। দলের প্রায় তিন হাজার কর্মী-সমর্থক-নেতা একটি বিশেষ ট্রেনে চেপে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে সরব হবেন বলে জানা গিয়েছে। সেখানে কর্মসূচি কী ভাবে হবে তা বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব অভিষেকেরই।

তৃণমূল সূত্রে খবর, আগামী ১ অক্টোবরই কর্মসূচিতে শামিল সকলকে দিল্লিতে একত্রিত করতে চাইছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পর পর দু’দিনের কর্মসূচি নিয়ে সে দিনই অভিষেক নির্দেশ দেবেন দলীয় নেতাদের। পরের দিন অর্থাৎ ২ অক্টোবর গান্ধী জয়ন্তীর সকাল থেকে রাজঘাটের কর্মসূচি শুরু হবে তৃণমূলের। সেখানে কী ভাবে তৃণমূল সাংসদ-বিধায়কেরা অংশ নেবেন, তা-ও বলে দেবেন অভিষেকই। এ ছাড়াও জব কার্ড হোল্ডারদের যন্তর মন্তরে ধর্না, কৃষি ভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কী ভাবে রূপায়িত হবে, তা-ও তুলে ধরবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সেই হিসাবে ওই তিন দিন চূড়ান্ত ব্যস্ততায় কাটার কথা অভিষেকের। কিন্তু ইডির সমনে সাড়া দিতে হলে তাকে দিল্লি থেকে ২ তারিখ রাত অথবা ৩ তারিখ ভোরের বিমানেই কলকাতায় ফিরে আসতে হবে অভিষেককে। যদিও দিল্লিতে তাঁর দল তখনও দ্বিতীয় দিনের ধর্না কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।

আরও পড়ুন
Advertisement