ছবি মুক্তি পাওয়ার পর তিন দশক পার হয়ে গিয়েছে। ছবিটির পাশাপাশি সুপারহিট হয়েছে সেই ছবির গানগুলিও। কিন্তু ছবির শুটিং শুরু হওয়ার পর বদলে গিয়েছিলেন সঙ্গীত পরিচালক। রেস্তরাঁর টেবিলে বাঁধা হয়েছিল ছবির মূল গান।
১৯৯১ সালে লরেন্স ডি’সুজ়ার পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘সাজন’। সঞ্জয় দত্ত, সলমন খান এবং মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত এই ছবিটির সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন নাদিম-শ্রবণ। কিন্তু লরেন্সের প্রথম পছন্দ ছিল অন্য সঙ্গীত পরিচালকের জুটি।
‘সাজন’ ছবির প্রযোজক ছিলেন সুধাকর বোকাঢ়ে। লরেন্স পরিচালিত ‘ন্যায় অন্যায়’ ছবির প্রযোজনার দায়িত্বেও ছিলেন সুধাকর। ফলে দু’জনের মধ্যে পেশাগত সম্পর্কের পাশাপাশি ছিল বন্ধুত্বও।
কানাঘুষো শোনা যায়, ‘সাজন’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের জুটিকে মনে ধরেছিল লরেন্স এবং সুধাকরের। ছবির গান তৈরির প্রস্তাব নিয়ে গেলে যে লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল জুটি ফিরিয়ে দেবেন না, সে বিশ্বাসও ছিল লরেন্স এবং সুধাকরের। হলও তাই। ছবির পরিচালক এবং প্রযোজকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গিয়েছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, সুধাকরের সঙ্গে লক্ষীকান্তের সম্পর্ক ভাল ছিল। একে অপরকে পছন্দও করতেন তাঁরা। সেই কারণেই ‘সাজন’ ছবির সঙ্গীত নির্মাণের প্রস্তাব পেয়ে ফেরাতে পারেননি লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল। রাজি হলেও গান তৈরির জন্য সময় পাচ্ছিলেন না তাঁরা।
গুঞ্জন শোনা যায়, লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের সঙ্গে যখনই ছবির গান নিয়ে লরেন্স আলোচনা করতে যেতেন, তখনই তাঁরা ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি দিনের পর দিন দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার পরেও খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতেন লরেন্স। অন্য দিকে ছবির শুটিংও শুরু হয়ে গিয়েছিল।
আসন্ন বিপদের আঁচ পেয়ে সুধাকরের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন লরেন্স। পরিচালক সুধাকরকে জানিয়েছিলেন যে, ছবির শুটিং শুরু হয়ে গিয়েছে। ছবির গানের রেকর্ডিংও তাঁদের শুরু করতে হবে। আর দেরি হলে ছবি মুক্তির আগে বিপদে পড়বেন তাঁরা।
লরেন্সের কথা শুনে টনক নড়েছিল সুধাকরের। বিন্দুমাত্র দেরি না করে লক্ষ্মীকান্তের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেছিলেন সুধাকর। বন্ধুর চিন্তা দূর করতে তাঁকে পরের দিনই স্টুডিয়োয় দেখা করতে যেতে বলেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত। কথামতো লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের স্টুডিয়োয় পৌঁছে গিয়েছিলেন সুধাকর।
সুধাকরের সঙ্গে দেখা করার পর একটি গানের সুর বেঁধেছিলেন লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল। গানের কিছু অংশ স্টুডিয়োয় রেকর্ডও করা হয়। কিন্তু তার পরেই কাজ আবার থেমে যায় ‘সাজন’ ছবির। আবার সঙ্গীত পরিচালকের স্টুডিয়োর দরজার সামনে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে শুরু করেন লরেন্স।
বলিপাড়ায় জনশ্রুতি, সুভাষ ঘাই এবং এন চন্দ্রের মতো খ্যাতনামী ছবিনির্মাতারা লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সোজা স্টুডিয়োর ভিতরে ঢুকে পড়তেন। কিন্তু সিটিং রুমের বাইরে অপেক্ষা করতেন লরেন্স।
লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলালের আচরণ দেখে সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন লরেন্স এবং সুধাকর। সেই সময় বলিপা়ড়ায় সঙ্গীতনির্মাতা হিসাবে পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন নাদিম-শ্রবণ। তাঁদের সঙ্গেই ‘সাজন’ ছবির গান নিয়ে আলোচনা করতে চাইলেন সুধাকর এবং লরেন্স।
সুধাকর এবং লরেন্সের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল নাদিমের। পরিচালক-প্রযোজকের প্রস্তাব শুনে তখনই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চান নাদিম। নাদিমের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ছবির শুটিংয়ের কিছু অংশ দেখান লরেন্স। সেই অনুযায়ী, লরেন্সকে দু’তিনটি গান শোনান নাদিম। কিন্তু লরেন্সের চোখেমুখে সন্তুষ্টির ছাপ ফুটে না ওঠায় অন্য সুর বাজিয়ে শোনান নাদিম। তা মন ছুঁয়ে যায় লরেন্সের।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, নাদিম-শ্রবণের সঙ্গে এক ঘণ্টার আলোচনায় ‘সাজন’ ছবির জন্য সাতটি গানের সুর পছন্দ করে ফেলেন লরেন্স এবং সুধাকর। এই গানগুলির কলি লিখেছিলেন সমীর।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে লরেন্স বলেছিলেন, ‘‘আমি কোনও দিন ভাবতেও পারিনি ‘সাজন’ ছবির গান এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।’’ কুমার শানু, অল্কা যাজ্ঞিক, পঙ্কজ উধাস, এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম, অনুরাধা পডওয়ালের মতো গায়কেরা এই ছবিতে গান গেয়ে কেরিয়ারে মাইলফলক গড়ে তোলেন।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ‘সাজন’ ছবির শুটিং শেষ হওয়ার পর এই ছবির ‘টাইটেল ট্র্যাক’-এর সুর তৈরি করা হয়েছিল। ‘দেখা হ্যায় পহেলি বার’ গানটির সুর তৈরি হয়েছিল রেস্তরাঁর টেবিলে।
বলিপাড়ার অধিকাংশের দাবি, নাদিম এবং শ্রবণের সঙ্গে জলখাবার খেতে একটি রেস্তরাঁয় গিয়েছিলেন সমীর। হঠাৎ করেই গানের প্রথম লাইন মাথায় আসে তাঁর। টেবিল বাজিয়ে পাশাপাশি সুরও বাঁধতে থাকেন নাদিম এবং শ্রবণ। খেতে বসেই একটি গান তৈরি করে ফেলেন তিন জন মিলে।
সমীরের মনে হয়, নতুন গানটি ‘সাজন’ ছবিতে যোগ করলে তা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। খাবারের টেবিলে বসে লরেন্সকে ফোন করেন নাদিম। তখন ছবির শুটিং শেষ হয়ে গিয়েছে। পোস্ট-প্রোডাকশনের কাজও প্রায় শেষ। এই সময় আবার নতুন গানের শুটিং কী ভাবে হবে তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন লরেন্স। কিন্তু জেদ ছাড়েননি নাদিম।
শেষ পর্যন্ত মাধুরী এবং সলমনকে তড়িঘড়ি শুটিংয়ের জন্য ডাকা হয়। গানের শুটিংয়ের জন্য উটি গিয়েছিলেন তাঁরা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা শুট করেন দুই তারকা।
সব ছবি: সংগৃহীত।