Anubrata Mondal

অনুব্রতের দিল্লি-নাটকের খবরকে গুরুত্ব দিল না তৃণমূলের দলীয় মুখপত্র, নাম নেই শিরোনামেও

১৯ ঘণ্টার মহানাটক শেষে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক নির্দেশ দেন, ১০ মার্চ পর্যন্ত ইডির হেফাজতে থাকবেন অনুব্রত। বীরভূমের তৃণমূল সভাপতি তখন বিচারকের দিল্লির বাড়িতেই হাজির।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩ ১১:১৯
TMC mouthpiece reports Anubrata Mondal\\\\\\\'s delhi trip

‘গুরুত্বহীন’ ভাবে অনুব্রত মণ্ডলের দিল্লিযাত্রার খবর ছাপল তৃণমূলের মুখপত্র। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

মঙ্গলবার দোলের দিন একটানা ১৯ ঘণ্টার মহানাটক শেষে বীরভূম তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে পেয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ফিরহাদ হাকিম ছাড়া রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রথম সারির কোনও নেতা তা নিয়ে মুখ খোলেননি। ফিরহাদ বলেছেন, ‘‘এজেন্সির জয় হবে না। জয় হবে মানুষের।’’ বুধবার সকালে তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রেও অনুব্রত সংক্রান্ত খবরটি কার্যত ‘গুরুত্বহীন’ ভাবেই প্রকাশিত হয়েছে। খবরটি প্রকাশিত হয়েছে মুখপত্রের তৃতীয় পাতায় মেরেকেটে শ’খানেক শব্দে। খবরের শিরোনামে অনুব্রতের নামও ব্যবহার হয়নি।

ঘটনাচক্রে তৃণমূলের আর এক প্রথম সারির নেতা তথা প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার খবর দলীয় মুখপত্রে গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়েছিল। গ্রেফতারির কয়েক দিনের মধ্যেই পার্থকে দলীয় সমস্ত পদ এবং মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সে খবরও প্রকাশিত হয়েছিল দলীয় মুখপত্রে। কিন্তু অনুব্রত এখনও তৃণমূলের বীরভূম জেলার সভাপতি। তাঁর এবং নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য সম্পর্কে দৃশ্যতই ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে শাসকদল।

Advertisement

প্রসঙ্গত, অনুব্রতের গ্রেফতারির পর থেকে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার তাঁর পাশে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। প্রকাশ্যে অনুব্রতের পাশে দাঁড়িয়েছেন ফিরহাদও। যদিও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অনুব্রত নিয়ে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। অনুব্রত দীর্ঘ দিন জেলে রয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে বীরভূম জেলায় দল চালাতে তৈরি হয়েছে কোর কমিটি। দলনেত্রী মমতা নিজে বলেছেন, বীরভূম দেখবেন তিনিই। এমনকি, অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ইডির ‘আগ্রহ’ নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সম্ভবত সেই কারণেই অনুব্রতকে নিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যে ‘নাটকীয়’ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা কার্যত এড়িয়েই গিয়েছে দলীয় মুখপত্র। যা থেকে অনেকে মনে করছেন, অনুব্রতকে নিয়ে যে ভাবে সারাদিন টানাহ্যাঁচড়া হয়েছে, তা ফলাও করে দলীয় মুখপত্রে বেরোলে ‘অন্য রকম’ সঙ্কেত যাবে। যদিও তৃণমূলের নেতাদের একাংশ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, ‘খবর’ যতটা, ততটাই ছাপা হয়েছে। গুরুত্ব না-দিলে তো অনুব্রতের খবর পুরোটাই বাদ দেওয়া যেতে পারত। বরং দলের মুখপত্র ‘পেশাদারি সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে।

বীরভূমের জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রতকে মঙ্গলবার সকালে আসানসোল জেল থেকে বার করে কলকাতায় নিয়ে আসে পুলিশ। কলকাতার ইএসআই হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর পর তাঁকে ইডির হেফাজতে তুলে দেওয়া হয়। ইডি তাঁকে নিয়ে যায় দিল্লি। সারাদিনের ঘটনাপ্রবাহের পর রাত প্রায় দুটো নাগাদ দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতের বিচারক মুখোমুখি শুনানিতে নির্দেশ দেন, ১০ মার্চ পর্যন্ত ইডির হেফাজতে থাকবেন অনুব্রত। কিন্তু তৃণমূলের মুখপত্রে অত বিস্তারিত খবর নেই। ‘দু’দিনের হেফাজত’ শীর্ষক খবরে মধ্যরাতের শুনানির কথা জানিয়ে লেখা হয়েছে, ১০ তারিখ দুপুর দুটোয় রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে অনুব্রতকে হাজির করানো হবে। অনুব্রতের আইনজীবী মুদিত জৈন জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিদিন স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে। জেরার সময় আইনজীবী উপস্থিত থাকতে পারবেন। আইনজীবী প্রতিদিন তাঁর সঙ্গে কথাও বলতে পারবেন। জৈনের আরও বক্তব্য, অনুব্রতের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট নিয়ম মেনে হয়নি। মাত্র একজন চিকিৎসক তাঁকে পরীক্ষা করেছেন। যা ঠিক নয়। কারণ, অনুব্রত একাধিক রোগে আক্রান্ত।

Advertisement
আরও পড়ুন