Manas Bhuian

পশ্চিম মেদিনীপুরে গোষ্ঠী রাজনীতি করছেন মানস! অভিযোগ জানিয়ে মমতাকে চিঠি তৃণমূল বিধায়কদের

চিঠিতে লেখা হয়েছে, জেলা জুড়ে কী ভাবে মানস ভুঁইয়া তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠী রাজনীতি শুরু করেছেন। আদি তৃণমূল বলে পরিচিত নেতাদের তিনি সংগঠনে কাজ করতে দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ বিধায়কদের।

Advertisement
অমিত রায়
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৩৩
TMC MLAs write to Chief Minister Mamata Banerjee alleging that Manas Bhuian is doing group politics in West Midnapore

(বাঁ দিকে) মানস ভুঁইয়া। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ডান দিকে) —ফাইল চিত্র।

মহুয়া মৈত্রের পরে মানস ভুঁইয়া। কিছু দিন আগে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়ার বিরুদ্ধে দলের সর্বময় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন তাঁর কেন্দ্রের অধীন তৃণমূলের পাঁচ বিধায়ক-সহ মোট ছ’জন। এ বার মমতার কাছে চিঠি গেল মন্ত্রী মানস ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে। মহুয়ার মতোই মানসের বিরুদ্ধে অভিযোগ দলের অন্দরে ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ করার।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরে গোষ্ঠী রাজনীতি করছেন মানস, এমনই অভিযোগ করে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতাকে চিঠি দিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের তৃণমূল বিধায়কদের একাংশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, যে সব বিধায়ক ওই চিঠিটি পাঠিয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই ‘আদি তৃণমূল’ বলে পরিচিত। ওই তালিকায় যেমন রয়েছেন কেশপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রী শিউলি সাহা, তেমনই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন দাঁতনের প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম প্রধান। প্রসঙ্গত, মন্ত্রী শিউলি এবং বিধায়ক বিক্রম উভয়েই তৃণমূলের ‘আদি’ নেতা বলে পরিচিত। সেই তুলনায় ২০১৬ সালে কংগ্রেস ছেড়ে আসা মন্ত্রী মানস তৃণমূলে ‘নব্য’। তবে তৃণমূলে তুলনামূলক ভাবে ‘নতুন’ হলেও বাংলার রাজনীতিতে গত ৪০ বছর ধরে পরিচিত নাম মানস। তাই বিধায়কদের চিঠিতে কতটা ফল হবে, তা নিয়ে দলের অন্দরে অনেকেই সন্দিহান। প্রসঙ্গত, মহুয়ার বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়ার পর তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে গিয়েছিলেন ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এক বিধায়ক। মমতা তাঁকে স্পষ্ট বলে দেন, নদিয়া জেলা নিয়ে আলোচনার সময় তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। এখন নয়।

শিউলি এবং বিক্রম ছাড়াও মানসের বিরুদ্ধে ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রাক্তন পুলিশকর্তা তথা ডেবরার বিধায়ক (যিনি আগে মন্ত্রীও ছিলেন) হুমায়ুন কবীর। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে কী ভাবে মানস ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ শুরু করেছেন, দু’পাতার চিঠিতে তা লেখা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, জেলার রাজনীতিতে ‘আদি’ তথা পুরনো তৃণমূল বলে পরিচিত নেতাদের সংগঠনে কোনও কাজ করতে দিচ্ছেন না মানস। নিজের লোকেদের ‘সুযোগ-সুবিধা’ দেওয়া অর্থাৎ, ‘স্বজনপোষণ’-এরও অভিযোগ করা হয়েছে মানসের বিরুদ্ধে। চিঠিতে এ-ও উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানসকে ‘গোষ্ঠী রাজনীতি’ করতে ‘যোগ্য সহায়তা’ করছেন সদ্য উপনির্বাচনে মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে জিতে আসা তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা সংগঠনের সভাপতি সুজয় হাজরা। পুরো ঘটনাপ্রবাহে জেলা সংগঠনের কাজকর্মে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন অভিযোগকারী বিধায়কেরা।

মুখ্যমন্ত্রী যদি জেলা রাজনীতির ওই বিষয়ে হস্তক্ষেপ না-করেন, তা হলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ফল আশানুরূপ না-ও হতে পারে বলে চিঠিতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ওই বিধায়কেরা। ঘটনাচক্রে, এ বার লোকসভা নির্বাচনে ব্যারাকপুর থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। তিনিই ছিলেন সেচমন্ত্রী। কিন্তু সাংসদ হওয়ার পর তাঁকে বিধায়ক পদের সঙ্গে সেচমন্ত্রীর পদও ছেড়ে দিতে হয়েছে। তাঁর জায়গায় সেচ দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মানসকে। সেচের পাশাপাশি জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীও মানস।

মঙ্গলবার সকালে ওই বিষয়ে জানতে মানসকে ফোন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পরে মানসের বক্তব্য পাওয়া গেলে তা এই প্রতিবেদনে যুক্ত করা হবে। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে আসার কয়েক মাসের মধ্যেই মানসকে রাজ্যসভায় পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মানসের ছেড়ে যাওয়া সবং বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের বিধায়ক হন মানসের স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া। আবার ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যসভার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও সবং বিধানসভায় মানসকে প্রার্থী করেন মমতা। জয়ী হলে মন্ত্রী হন মানস। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের দেখভালের দায়িত্বও মানসের হাতেই।

Advertisement
আরও পড়ুন