কলকাতা হাই কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
হাই কোর্টে শুনানির পর নির্যাতিতার পরিবার জানান, তাঁরা হতাশ নন। মেয়ের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় সুবিচারের জন্য যত দূর যাওয়ার দরকার, তাঁরা যাবেন। নির্যাতিতার বাবা বলেন, “দেরি হোক, কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরব। আমাদের জীবনের একটাই লক্ষ্য। আমরা যে কোনও ভাবে সুবিচার আদায় করব। কী ভাবে আসছে, তা দেখার দরকার নেই।” তাঁদের দাবিকে সিবিআই এবং আদালত উভয়েই মান্যতা দিয়েছে বলেও জানান নির্যাতিতার বাবা।
সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে আরজি করের তদন্ত চলছে কি না, সে বিষয়ে মঙ্গলবার ভিন্ন মত উঠে আসে সিবিআই এবং নির্যাতিতার পরিবারের। এমন অবস্থায় নির্যাতিতার পরিবারকে হাই কোর্টের একক বেঞ্চ জানিয়েছে, ডিভিশন বেঞ্চ বা সুুপ্রিম কোর্ট থেকে ব্যাখ্যা নিয়ে আসার জন্য। তদন্ত আদালতের নজরদারিতে চলছে কি না, সে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরই এই আবেদন শোনা হবে বলে জানান বিচারপতি ঘোষ। তিনি বলেন, “এই মামলা শুনতে অসুবিধা নেই। কিন্তু ব্যাখ্যা থাকা প্রয়োজন।” তাই মামলাকারীর আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার ব্যাখ্যা জেনে আসার জন্য বলেছেন বিচারপতি। আগামী ১৫ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্যে আপত্তি জানান নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী জানান, সুপ্রিম কোর্ট কোনও নজরদারি করেনি। শীর্ষ আদালতের কোনও নির্দেশে এমন কথা বলা হয়নি বলে আদালতে দাবি নির্যাতিতার পরিবারের।
সিবিআইয়ের তরফেও হাই কোর্টে জানানো হয় যে, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতেই আরজি কর-কাণ্ডের তদন্ত চলছে। সেখানে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট ধাপে ধাপে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আইনজীবী। পরিবারের আইনজীবীকে বিচারপতি ঘোষ জানান, মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। এই অবস্থায় পরিবারের কী আবেদন সেটি খতিয়ে দেখতে পারে তাঁর এজলাস।
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবীকে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ প্রশ্ন করেন, “দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই মামলা দেখছে। এখন কেন আপনার বক্তব্য শুনব?”
নির্যাতিতার পরিবারের আইনজীবী হাই কোর্টে অতিরিক্ত হলফনামা দেওয়ার কথা জানান। তাতে বিচারপতি জানতে চান, হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের কী আবেদন ছিল। পরিবারের তরফে জানানো হয়, ডিভিশন বেঞ্চে উপযুক্ত তদন্তের আবেদন জানানো হয়েছিল। ডিভিশন বেঞ্চ থেকেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার সকাল ১১টা নাগাদ বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চ বসে হাই কোর্টে। শুরু হয় নির্যাতিতার বাবা-মায়ের আবেদনের শুনানি।
সুপ্রিম কোর্টে ওই দিন নির্যাতিতার বাবা বলেছিলেন, ‘‘আদালতে দাঁড়িয়ে এ ভাবে মিথ্যা বলা যায়, তা আমরা জানতাম না। সেই মিথ্যার উপর সুপ্রিম কোর্ট নজরদারি চালাচ্ছে। সিবিআই আদালতে বলছে, তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। কিন্তু আমরা কিছুই জানতে পারি না।’’
সিবিআই তদন্ত নিয়ে নির্যাতিতার বাবা-মায়ের ক্ষোভের আঁচ মিলেছিল গত ১০ ডিসেম্বর। সে দিন সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের বেঞ্চে আরজি করের ওই মহিলা চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ এবং খুনের বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শীর্ষ আদালত আগেই এই মামলার শুনানিতে সিবিআইকে বলেছিল, নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে যেন যোগাযোগ রাখেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। নির্যাতিতার বাবা-মা সে দিন সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ করেছিলেন, সিবিআই তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে না।
আরজি কর মামলায় সিবিআইয়ের তদন্তের উপর ভরসা রাখতে পারছেন না নির্যাতিতা মহিলা চিকিৎসকের বাবা-মা। আরও বিশদ তদন্ত চেয়ে তাই কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁরা। গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে তাঁরা এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মঙ্গলবার ওই মামলার শুনানি রয়েছে হাই কোর্টে।