Jadavpur University Convocation Ceremony

রাজ্যপালের উপস্থিতি ছাড়াই সমাবর্তন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে, তবে হাজির ‘বোসের দূত’

গত বছর সমাবর্তন ঘিরেও চূড়ান্ত বিতর্ক দেখা দেয়। রাজ্যপাল সমাবর্তন করতে বারণ করেন। তৎকালীন অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ যদিও রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করেন।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১১:০১
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সমাবর্তন। মঙ্গলবার সকালে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে সমাবর্তন। মঙ্গলবার সকালে। —নিজস্ব চিত্র।

রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সংঘাতের আবহেই যাদবপুরে সমাবর্তন শুরু হল। প্রথা মেনে মঙ্গলবার সকালে প্রথমে কোর্ট বৈঠক হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাজভবন সূত্রে খবর, এই কোর্ট বৈঠকের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সকালেও রাজভনের তরফে ফোন আসে বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে রাজভবনের আপত্তি সত্ত্বেও নির্দিষ্ট সময়েই ওপেন এয়ার থিয়েটারে সমাবর্তন শুরু হয়।

Advertisement

সোমবার রাজভবনের তরফে সমাজমাধ্যমে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে আইনের খুঁটিনাটি তুলে ধরে অন্তর্বর্তী উপাচার্যের আচরণ আইন ও বিধির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মন্তব্য করা হয়। এমনকি, বেআইনি কাজ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ডিগ্রির বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য সমাজমাধ্যমের একটি পোস্টে সমাবর্তন ঘিরে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দেন।

পদাধিকার বলে রাজ্যপাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাঁর উপস্থিতিতেই কোর্ট বৈঠক শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্যপাল যাননি। তবে কোর্ট বৈঠকে রাজ্যপালের মনোনীত প্রতিনিধি জিতেন্দ্রনাথ রায় উপস্থিত ছিলেন। শেষমেশ বোসের সেই ‘দূত’, ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ভাস্কর গুপ্ত, সহ-উপাচার্যের উপস্থিতিতে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে কোর্ট বৈঠক শুরু হয়। তার পর শুরু হয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান।

যাদবপুরের সমাবর্তন নিয়ে রাজভবনের অভিযোগ ছিল যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ (বিধি) না-মেনে তাড়াহুড়ো করে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। বিষয়টিকে ‘সম্পূর্ণ বেআইনি’ বলে অ্যাখা দেন রাজ্যপাল। বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে তিনি এটাও উল্লেখ করেন যে, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হবে কিছু দিনের মধ্যেই। তাঁর হাতেই সমাবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া ভাল। এত তাড়াহুড়ো কেন করা হচ্ছে? তাড়াহুড়োয় সমাবর্তন করা হলে ডিগ্রিপ্রাপকদের সমস্যা হতে পারে বলে জানানো হয়।

আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এ বারও সাম্মানিক ডি-লিট বা ডিএসসি দেওয়া হবে না। শুধু পড়ুয়াদের ডিগ্রি দেওয়া হবে। এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে রয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তন অধিকর্তা অমিতাভ ঘোষ।

উল্লেখ্য, গত বছর সমাবর্তন ঘিরেও চূড়ান্ত বিতর্ক দেখা দেয়। রাজ্যপাল সমাবর্তন করতে বারণ করেন। তৎকালীন অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ সেই আপত্তি গ্রাহ্য না-করে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করেন। সমাবর্তনের ঠিক আগের রাতে তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেন রাজ্যপাল। তার পরেও রাজ্য সরকারের অনুমতিকে গুরুত্ব দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান করেন বুদ্ধদেব।

সমাবর্তনে রাজ্যপালের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং বর্তমান শিক্ষক রাজ্যেশ্বর সিন্‌হা বলেন, “রাজ্যপাল এক বার বলছেন সমাবর্তনে আসব। আর এক বার বলছেন না। ওঁর এই আচরণ কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমার জন্যই নয়, রাজ্যপাল পদের গরিমার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়।” বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কথায়, “উনি (রাজ্যপাল) আসেননি। আমি কী করব? এলে খুব ভাল লাগত। আমি সারা জীবন সৎ ভাবে চলার চেষ্টা করেছি।”

Advertisement
আরও পড়ুন