এসএসকেএম হাসপাতালের বাইরে মদন মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শতেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি না হলে তাঁর কোনও বড় বিপদ ঘটে যেতে পারত। মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে বাঙ্গুরের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে এমনটাই মন্তব্য করলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র।
সোমবার জ্বর এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন। তৃণমূল বিধায়কের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে খবর, তাঁর নিউমোনিয়া হয়েছে। আপাতত উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন মদন। মঙ্গলবার দুপুরে সেখান থেকে তাঁকে পরীক্ষার জন্য বাঙ্গুরের এক পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে একটি হুইলচেয়ারে বসে বেরিয়ে আসতে দেখা যায় মদনকে। অনর্গল কাশছিলেন তিনি। কথা বলছিলেন জড়়িয়ে জড়িয়ে।
হাসপাতাল থেকে বেরোনোর সময় মদন বলেন, ‘‘বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। নিউমোনিয়ার সমস্যা রয়েছে। গত ১৫ দিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছিলাম। ঠিক সময়ে হাসপাতালে না এলে কিছু হয়ে যেত। মুখ্যমন্ত্রীকে অসুস্থতার কথা বলার পর উনি অরূপকে বলে দেন। তার পরই আমি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হই। দলই ভর্তি হতে বলেছে। চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।’’
এর পর আবার পরীক্ষা করিয়ে হাসপাতালে ফিরে আসার সময় মদন জানান, হাসপাতালের আটটি বিভাগ তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গেও তাঁর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানান মদন। তিনি এ-ও জানান, মঙ্গলবার তাঁর ২৯তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি যেতে পারছেন না। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘হাসপাতাল চেষ্টা করছে। আটটা বিভাগের বিশেষজ্ঞরা দেখে গিয়েছেন। এক কথায় বলা যেতে পারে যে বুকের সমস্যা বেশি। কাল রাত থেকে ইঞ্জেকশন শুরু হয়েছে। আজ কথা ছিল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার। আমি মুখ্যমন্ত্রী এবং অরুপ বিশ্বাসের কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁদের সাহায্যেই ভর্তি হতে পেরেছি। আমি বুঝতে পারছি যে, আমি যে অসুখ নিয়ে এসেছি, তা এক দিনে যাবে না। নিউমোনিয়ায় এখন অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ভগবানের দয়ায় আমি ঠিক হয়ে যাব।’’
ঘটনাচক্রে, এই এসএসকেএমের বিরুদ্ধেই কয়েক মাস আগে গর্জে উঠেছিলেন মদন। ঘটনার সূত্রপাত মে মাসে। এসএসকেএম হাসপাতালে এক দুর্ঘটনাগ্রস্ত যুবককে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন মদন। শুভদীপ পাল নামে ওই যুবক নিজেও স্বাস্থ্যকর্মী বলে মদন দাবি করেছিলেন। তাঁকেই ভর্তি করাতে মদন এসএসকেএমে যান। কিন্তু তাঁকে হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি বলে মদন অভিযোগ করেন। সেখানে দাঁড়িয়েই মদন বলেন, দরকার হলে তিনি নিজের ঘড়ি-আংটি বিক্রি করে ওই যুবকের চিকিৎসা করাবেন। হাসপাতালের বিরুদ্ধে দালালরাজের অভিযোগ তুলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের দাবিও করেন। অন্য দিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, শুক্রবার রাতে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক বৈঠক করে ‘গুন্ডামি’র অভিযোগ করেন। তবে পরে বিষয়টি মিটে যায়। সেই এসএসকেএমেই সোমবার ভর্তি হয়েছেন মদন।
প্রসঙ্গত, বিধানসভায় এখন শীতকালীন অধিবেশন চলছে। মদনের ঘনিষ্ঠ সূত্রে খবর, সোমবার দুপুরে শারীরিক অসুস্থতার মধ্যেও বিধানসভা গিয়েছিলেন বিধায়ক। বিধানসভায় খানিকটা অসুস্থ বোধ করেন তিনি। রাতের দিকে সমস্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মদনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের একটি সূত্রে খবর, সোমবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডের ২০৬ নম্বর কেবিনে ভর্তি করানো হয় মদনকে। চিকিৎসক অতনু পালের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছে। বুকে ঠান্ডা লেগে নিউমোনিয়া হয়েছে বলে প্রাথমিক অনুমান করছেন চিকিৎসকেরা। তবে পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেলে নিশ্চিত হবেন তাঁরা। মদনের অসুস্থতার খবর ছড়িয়ে পড়তেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিধায়কের রাজনৈতিক সতীর্থ থেকে সমর্থকেরা। বিধায়কের শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তাঁরা।