Kunal Ghosh Narayan Banerjee

কুণালের সঙ্গে একান্ত বৈঠক চিকিৎসক-আন্দোলনের ‘নেতা’ নারায়ণের, জুনিয়ররা বলছেন, ‘আমরা জানিই না!’

কুণালের সঙ্গে দেখা করার পরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে নারায়ণ বলেন, ‘‘আমি এক জন নাগরিক। আমি এক জন চিকিৎসক। কুণাল ঘোষও এক জন নাগরিক এবং সাংবাদিক। আমরা দেখা করেছি, কথা বলেছি।’’

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ২১:১৩
TMC Leader Kunal Ghosh had a meeting with leftist doctor Narayan Banerjee

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বৈঠকের পর তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এবং চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

তিনি বাম যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে ‘ক্যাপ্টেন’ বলেন। তিনি ভোটে সিপিএমের প্রার্থীর হয়ে প্রচার করেন। সেই তিনি সিপিএমপন্থী চিকিৎসক নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেশ খানিক ক্ষণ বৈঠক করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের সঙ্গে। জুনিয়র ডাক্তারেরা ধর্মতলার যেখানে অবস্থান করছেন, তার এক কিলোমিটারের মধ্যে নারায়ণ-কুণাল বৈঠক হয়েছে। যা নিয়ে কৌতূহলের পারদ চড়তে শুরু করেছে।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, জুনিয়র ডাক্তারেরা যাতে অনশন থেকে বার হতে পারেন, সেই পথের সন্ধানেই কুণালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নারায়ণ। যদিও জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্টের অন্যতম নেতা আশফাকউল্লা নাইয়া বলেন, ‘‘কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কারও সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে এ টুকু বলতে পারি, জুনিয়র ডাক্তারেদর তরফ থেকে উনি যাননি। আমরা কিছু জানি না।’’

কুণালের সঙ্গে দেখা করার পরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে নারায়ণ বলেন, ‘‘আমি এক জন নাগরিক। আমি এক জন চিকিৎসক। কুণাল ঘোষও এক জন নাগরিক এবং সাংবাদিক। আমরা দেখা করেছি, কথা বলেছি।’’ তবে কী নিয়ে কথা হয়েছে, সে ব্যাপারে দু’জনের কেউই মুখ মুখ খোলেননি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সিপিএমপন্থী নারায়ণ এবং তৃণমূলের কুণালের বৈঠককে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ বলেই মনে করছেন অনেকে। চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে? নারায়ণের জবাব, ‘‘এ নিয়ে আমি কোনও কথা বলব না।’’ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, নারায়ণ বলেননি যে, তাঁর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের বিষয়ে কুণালের কোনও কথা হয়নি।

নারায়ণ সমাজমাধ্যমে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র সমালোচক। আবার নারায়ণের বিভিন্ন ছবি-ভিডিয়ো নিয়ে তৃণমূলের সাইবার বাহিনীও সমাজমাধ্যমে পাল্টা সমালোচনায় মুখর হয়েছে। সেই নারায়ণ কুণালের সঙ্গে বৈঠক কেন করলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। নারায়ণের বক্তব্য, এর আগে তাঁর সঙ্গে কুণাল ঘোষের আলাপ হয়েছিল একটি রক্তদান শিবিরে। ফলে এই প্রথম তাঁদের সাক্ষাৎ হল বিষয়টি তেমন নয়। আবার এ-ও ঠিক, রক্তদান শিবিরের মতো একটি সামাজিক কর্মসূচিতে সাক্ষাৎ হওয়া আর একান্তে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করা দুটো এক বিষয় নয়।

কুণালের সঙ্গে তাঁর বৈঠক নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই তিনি সমাজমাধ্যমে একটি ভিডিয়ো বার্তা দিয়েছেন। যেখানে তিনি বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘ডেডলক সিচুয়েশন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, ‘‘আদালতে মামলা চলছে। তা সময়সাপেক্ষ। এই পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বিষয়টিকে আনা যায় কি না, সে বিষয়ে স্বাস্থ্য তফতরের ব্যক্তির কাছে যাতে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই কারণেই আমি গিয়েছিলাম।’’ জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে নারায়ণ ‘এক পা আগে, দুই পা পিছে’ বার্তাও দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আন্দোলনের জন্য আন্দোলন নয়। ১০ দফা দাবি ছিনিয়ে আনার জন্যই কিন্তু আন্দোলন।’’

নারায়ণ কেন কুণালের সঙ্গে দেখা করলেন তা নিয়ে সিপিএমের মধ্যেও আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। সিপিএম সূত্রে খবর, গত লোকসভা ভোটে নারায়ণকেই দমদম লোকসভায় প্রার্থী করতে চেয়েছিল দল। কিন্তু পারিবারিক নানা ‘বাধা’র ফলে নারায়ণ শেষ পর্যন্ত সিপিএমকে না করেছিলেন বলে খবর। সিপিএমের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, আগামী বিধানসভা ভোটে উত্তর দমদম কেন্দ্রে নারায়ণকে প্রার্থী করার বিষয়েও দলের মধ্যে ভাবনাচিন্তা রয়েছে। সেই নারায়ণ বৃহস্পতিবার বৈঠক করলেন তৃণমূলের কুণালের সঙ্গে। প্রায় এক ঘণ্টা। রুদ্ধদ্বার।

আরও পড়ুন
Advertisement