তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে চলা হিংসা ও প্রাণহানির ‘দায়’ নিল না শাসক তৃণমূল কংগ্রেস। বরং, তৃণমূল নিজের শক্তি প্রয়োগ করলে বিরোধীরা দাঁড়াতেই পারত না বলে মন্তব্য করলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘নির্বাচন তো করছে কমিশন, আদালতের নির্দেশে। এই সব ঘটনা কারও নিয়ন্ত্রণে ছিল না।’’ এই সূত্রে হিংসা, হানাহানির ঘটনা সম্পর্কে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের তোলা প্রশ্নে তাঁকেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।
মনোনয়ন-পর্ব থেকে শুরু হিংসায় এ পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যুর ঘটনায় বহু ক্ষেত্রে অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধেই। বিরোধী প্রার্থীদের উপরে চাপ সৃষ্টি, হামলার অভিযোগও আসছে। কলকাতা প্রেস ক্লাবে বৃহস্পতিবার ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, ‘‘আমরা বারবার বলেছি, নির্বাচন হবে নির্বিঘ্ন, শান্তিপূর্ণ। তৃণমূলের এখন যে শক্তি, তাতে তৃণমূল গায়ের জোর প্রয়োগ করলে আমাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারত না!’’ মৃত্যুর ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা রক্তপাতহীন, সন্ত্রাসহীন নির্বাচন চাই। কারণ আমরা মনে করি, নির্বাচন কাজের মাপকাঠি, জনপ্রিয়তার মাপকাঠি।’’ এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের ভূমিকার সমালোচনা করে তাঁর অভিযোগ, ‘‘মৃত্যু নিয়ে বিরোধীরা দেউলিয়া রাজনীতি করছে।’’
শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের এমন দাবির প্রেক্ষিতে পাল্টা সরব হয়েছে বিরোধীরাও। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, ‘‘ঝুলি থেকে কালো বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে! মানুষ শান্ত তৃণমূলকে দেখে এতটাই খুশি যে, আর অশান্ত তৃণমূলকে দেখার সুযোগ দেবে না!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল সংযত থেকেই যদি এই হাল হয় রাজ্যে, অসংযত হলে না জানি কী হত! যিনি বলছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা চাইছি বলে দাবি করছেন, তিনি আগে উত্তর দিন, তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ফলতা ও বজবজে কার্যত কেন কোনও বিরোধী দাঁড়াতে পারেনি? দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৬টা ব্লকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হচ্ছে কাউকে? আর এই রকম দাবি উনি পুরভোটের সময়েও করেছিলেন।’’
প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেই অতীতের উদাহরণ সামনে টেনে আনে শাসক দল। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ধারাবাহিক হিংসা ও মৃত্যুর পরেও ২০০৩ এবং ২০০৮ সালে বাম জমানায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ের হানাহানি ও মৃত্যুর ঘটনাগুলিকে সামনে এনেছেন তৃণমূলের নেতারা। অভিষেকও এ দিন বলেন, ‘‘এই রকম কোনও মৃত্যুকে তুলনা টেনে ব্যাখ্যা করতে চাই না। তবে সিপিএমের আমলে তো হয়েছে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, এ বার মনোনয়ন ছিল নির্বিঘ্ন। তিনি বলেন, ‘‘এই যে প্রায় ১০০% আসনে মনোনয়ন হয়েছে, ভোট হবে, এ কথা কেউ বলছেন না। দু’লক্ষ ৩৬ হাজার মনোয়ন জমা পড়েছে। ভবিষ্যতে এই হিংসার সংস্কৃতিতেও আমরা ইতি টানব।’’ পাশাপাশি ভোটের দিন যাতে অশান্তি না হয়, তার জন্য দলের সব স্তরের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন অভিষেক।
পঞ্চায়েতের প্রচারে বুধবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছিলেন, তৃণমূলে ধরে রাখার জন্য তাঁকে উপ-মুখ্যমন্ত্রী করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘যিনি মাত্র ৫ লাখে বিক্রি হয়ে যান, তাঁকে কেউ উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ অফার করতে পারে! শুভেন্দু অধিকারীর ‘রেট’ মাত্র ৫ লাখ। ওঁকে কাগজে মুড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। টিভির পর্দায় এসেছিল সেই ছবি। মহারাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘অজিত পওয়ারের রেট তবু ভাল। তাঁর হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে রেখেছে শুনেছি। কিন্তু এঁর (শুভেন্দু) রেট মাত্র ৫ লাখ! বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া ওঁর আর কি যোগ্যতা আছে?’’ মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পটবদলের প্রসঙ্গে অভিষেকের মন্তব্য, ‘‘আমাদের অজিত পওয়ার, একনাথ শিণ্ডেরা আগেই চলে গিয়েছে!’’
রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ ফের এ দিন সবিস্তার তুলে ধরেন অভিষেক। তাঁর দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে হেরে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় মানুষের ১০০ দিনের টাকা আটকে রেখেছে। আবাস প্রকল্পের টাকা আটকে রেখেছে। কিন্তু লোকসভা বা বিধানসভায় যেখানে বিজেপি জিতেছে, সেখানে এক জনও বলতে পারবেন না, রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ পাননি।’’