কৌস্তুভের গ্রেফতারি নিয়ে ভিন্ন মত তৃণমূলে। কুণালের বিপরীত মত শশী-তাপসের। ফাইল চিত্র।
কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তুভ বাগচীর গ্রেফতারি নিয়ে ভিন্ন সুর শোনা গেল তৃণমূলের অন্দরেই। শনিবার সকালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। বেলা বাড়তেই কৌস্তুভের গ্রেফতারি নিয়ে বিস্ফোরক পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ। তার পরে অবশ্য ১০০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিনে মুক্তি পান এই কংগ্রেস নেতা। এর পর তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করলেন রাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী শশী পাঁজা। পৃথক সাংবাদিক সম্মেলন করে কৌস্তুভের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাপস রায়ও। শুক্রবার বিধান ভবনে কৌস্তুভ সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে অবমাননাকর মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘একজন মানুষ বিভিন্ন চ্যানেলে গিয়ে, কখনও ফেসবুক লাইভ করে, আবার কখনও সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করছেন। তিনি নাকি এক জন রাজনৈতিক কর্মী। তাঁর মুখে কেমন ভাষা দেখুন।’’ এ কথা বলে কৌস্তুভের একটি ভিডিয়ো ফুটেজ দেখানো হয়। যেখানে কংগ্রেস নেতা মুখ্যমন্ত্রী প্রসঙ্গে বেশ কিছু মন্তব্য করছেন। সেই মন্তব্যকে অবমাননাকর বলে দাবি করেছেন শ্যামপুকুরের বিধায়ক। শশী বলেন, ‘‘আমরা মনে করি ভাল কথা বলার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু তার মানে এটা নয়, যে কুকথা বলার স্বাধীনতা আছে। আমরা মনে করি রোদ্দুর রায় এবং কৌস্তুভ বাগচী একই অপরাধ করেছেন।’’ এরপরেই তাঁর গ্রেফতারি নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আইনি ব্যবস্থার কথা বলছেন? যাঁরা নারী বিদ্বেষী কথা বলেন, যাঁরা মহিলা বিদ্বেষী কথা বলেন, বিকৃত মানসিকতা নিয়ে ঘোরেন, তার বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাঁরা এই ধরনের বিকৃত মানসিকতা নিয়ে চলেন তাঁদের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেই মতোই আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
বরিষ্ঠ তৃণমূল নেতা তথা বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায়ও একই সুরে কৌস্তুভের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘কৌস্তুভ বাগচী বিকৃতমনস্ক এবং বিকৃত রুচিসম্পন্ন। ওঁর মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু একজন জনপ্রিয় নেত্রীই নন, গোটা দেশে তিনি একজন বরিষ্ঠ নেত্রী হিসাবে সম্মানিত হন। তাঁর সম্পর্কে যে ভাবে কৌস্তুভ কুরুচিকর মন্তব্য করেছেন তা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না।’’ এমনকি বিষয়টি যদি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব সনিয়া গান্ধী বা রাহুল গান্ধীর নজরে আসে তা হলে হয়তো তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করাও হতে পারে বলে দাবি করেছেন তাপস। তবে কুণালের মত, “আমি তৃণমূলের বিরুদ্ধে নই। আমি তৃণমূলের হিতৈষী। তবে আমি বলব, কৌস্তুভকে গ্রেফতার করা ঠিক হয়নি।” সকালে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের ছাত্রযুবরা কৌস্তভের অসভ্যতা বুঝে নিতে পারত। কিন্তু পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করা ঠিক হল না। এতে কৌস্তুভ প্রচার পাবে, বিরোধী শক্তির অশুভ আঁতাতের কুৎসিত রাজনীতির হাতিয়ার হবে, একাংশ মিডিয়ার পক্ষপাতদুষ্ট প্রচারের মুখ হবে, কিছু মানুষের সহানুভূতি পাবে। গ্রেফতারকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করবে তারা।’’
শুক্রবার বিধান ভবনে কংগ্রেসের এই আইনজীবী-নেতা যে সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন, তার নিন্দাই করেছিলেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘কৌস্তুভ অন্যায় করেছে। মাতৃসমা মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্কে ওই ধরনের চরম কুৎসা বরদাস্ত করা যায় না।’’ তবে এই মত নিজের ব্যক্তিগত বলেই জানিয়েছেন তিনি। কুণালের মতামত নিয়ে শশীর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত স্তরে বা সোশ্যাল মিডিয়ায়, যে কেউ নিজের ব্যক্তিগত মতামত জানাতেই পারেন।’’ তাঁদের মতামতই যে দলের অবস্থান তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শশী।