অনুব্রত মণ্ডল। —ফাইল চিত্র।
অনুব্রত মণ্ডল নেই। কিন্তু, বীরভূমে ‘রক্তপাতহীন’ ভোটে কার্যত একতরফা দাপট বজায় থাকল শাসকেরই। সকাল থেকে বুথে বুথে বিরোধী নির্বাচনী এজেন্টদের বসতে না দেওয়া থেকে ছাপ্পা, ভোট লুট এবং সন্ত্রাস— অনুব্রতর জমানার মতোই যাবতীয় অভিযোগ উঠল এ বারেও। বেলা যত গড়িয়েছে, অভিযোগ তত বেড়েছে। আতঙ্কে কাঁদতে দেখা গিয়েছে মহিলা ভোটকর্মীকে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে প্রতিরোধও হয়েছে। যা গত বার ছিল না বললেই চলে।
তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, ‘রোগ’ হওয়ার আগেই ‘প্রতিষেধক’ দিতেন অনুব্রত। তাই রোগের প্রকাশ সে ভাবে হত না। ভোট-পর্বে জেলায় খুনোখুনি বা রক্তপাতও সে ভাবে দেখা যেত না। বছরের বাকি সময় বীরভূমে যতই খুনোখুনি হোক না কেন, ভোটের দিন সেই জেলা থাকত ‘শান্ত’। ব্যতিক্রম ছিল ২০১৮। মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে খুন হয়েছিলেন এক জন। বিরোধীদের অভিযোগ, এ বারেও কাজ করেছে সেই সব অদৃশ্য দাওয়াই।
বিরোধীদের দাবি, সম্পূর্ণ ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মেলেনি। প্রশাসন ‘সক্রিয়’ ভাবে শাসকের পাশে থাকলে অনুব্রতের ভোট কৌশল বদলাবে কী ভাবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলছেন, ‘‘কৌশলগত তফাত নেই। শুধু অনুব্রতের মতো কর্মীদের উপরে নয়, এ বারে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ছিল পুলিশ ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদত। কোন বুথে শাসকদল দুর্বল, কোন বুথে অন্তর্ঘাত, সেই হিসেব প্রশাসনের কর্তাদের কাছে রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, প্রশাসন ‘নিষ্ক্রিয়’ থেকে ভোট লুটে সহায়তা করেছে।
বিজেপি-র বোলপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডলের দাবি, ‘‘অনুব্রত থাকা আর না থাকায় কোনও তফাত নেই। মনোনয়ন পর্ব থেকে আমরা সেটাই দেখছি। ভোটের দিনও সেই প্রথাই বজায় থাকাল।’’ বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বাবন দাসের কথায়, ‘‘বুথে না আছে পুলিশ, না আছে আধাসেনা। পরিণাম কাঙ্ক্ষিত।’’
তবে তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ‘‘বিরোধীরা ভেবেছিল অনুব্রত মণ্ডল নেই। আমরা যা ইচ্ছে করতে পারি। কিন্তু, তার জন্য তো সারা বছর মানুষের পাশে থাকতে হয়। মানুষের হয়ে কাজ করতে হয়।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘পরিণাম কী হবে, তা তাঁরা বুঝে গিয়েছেন। তাই ঝামেলায় উস্কানি দিয়েছেন।’’