কলতান দাশগুপ্ত। —ফাইল চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নায় হামলার চক্রান্ত সংক্রান্ত একটি ফোনালাপের অডিয়ো শুক্রবারই প্রকাশ্যে এসেছিল। যদিও তার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। সেই ঘটনায় শনিবার ভোরে গ্রেফতার করা হয়েছে বাম যুব নেতা কলতান দাশগুপ্তকে। ভাইরাল ওই অডিয়োটি প্রকাশ্যে এনেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। যে দু’জনের ফোনালাপ তিনি প্রকাশ্যে এনেছিলেন, তাতে একজনকে সম্বোধন করেছিলেন ‘স’ বলে এবং অপরজনকে ‘ক’ বলে। ঘটনাচক্রে, যে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদের নামের আদ্যাক্ষরও তা-ই। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয়েছিল সঞ্জীব দাসকে। যাঁর নামের আদ্যাক্ষর ‘স’। শনিবার ভোরে গ্রেফতার কলতান। আদ্যাক্ষর ‘ক’।
গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ‘ষড়যন্ত্র’-এর তত্ত্বেই আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা কলতানের। বাম যুব নেতার দাবি, “নিশ্চয়ই এর পিছনে ষড়যন্ত্র আছে।” আরজি করের নির্যাতিতা বিচারের দাবিতে ‘আসল আন্দোলন’ থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেই প্রশাসন এই পদক্ষেপ করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শমীক লাহিড়ীও প্রশ্ন তুলেছেন, “এ ভাবে গ্রেফতার করে কি আন্দোলন দমানো যাবে?” তবে অডিয়ো ক্লিপ বিতর্কে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
তবে কলতানের এই ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন কুণালও। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে যা বলবেন, দেখাবেন, সব সত্যি! আর বিরোধীদের অডিয়ো বার হলে সেটা চক্রান্ত?” উল্টে বাম নেতাদের উদ্দেশেই তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ওই কণ্ঠস্বর কলতানের কি না সেটি স্পষ্ট করার জন্য। প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ লিখেছেন, “সুজনদারা বলুন, গলা কলতানের কি না?” তাঁর দাবি, জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নায় ‘অন্তর্ঘাতমূলক হামলার চক্রান্ত ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলেই এত রাগ।
বাম যুব নেতা গ্রেফতার হতেই ভাইরাল অডিয়ো ক্লিপে উঠে আসা ‘সাহেব’-এর পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের যুহ নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য। সমাজমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “ভাবতেও অবাক লাগে, এই পরিকল্পনার অন্যতম অংশ সিপিএম তথা ডিওয়াএফআই নেতা কলতান। এখন প্রশ্ন, কথোপকথনের ‘সাহেব’ ব্যক্তিটি কে?” পুলিশ যাতে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ‘মাথা’কে গ্রেফতার করে, সেই দাবিও তুলেছেন দেবাংশু। তাঁর সন্দেহ, “১৪ তারিখ রাতের হামলার (আরজি করে হামলা) ঘটনাতেও এরাই যুক্ত।”
কী শোনা গিয়েছিল প্রকাশ্যে আসা কথোপকথনে?
কুণালের প্রকাশ করা অডিয়োয় এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সাহেব অর্ডার করেছে সল্টলেক ওড়ানোর জন্য।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘অর্ডার হলে করে দে।’’ জবাবে প্রথম ব্যক্তি, ‘‘যারা পার্টনার আছে সবাই প্রশ্ন করছে?’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলছেন, ‘‘কিছু ভেবেই তো বলেছে।’’ তা শুনে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমি এত বছর এই কাজ করেছি, কোনও দিন ভয়ডর লাগেনি। কিন্তু এখন এটাতে বিবেকে লাগছে। করাটা কি ঠিক হবে? ওরা তো লোকের জীবন বাঁচায়।’’
ফোনালাপ এখানেই শেষ নয়। এর পরই দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘তোকে তো ফাইট টু ফিনিশ করতে বলেনি।’’ প্রথম ব্যক্তির জবাব, ‘‘ছেলেরা মদ খেয়ে যায়। মারতে গিয়ে বেহাত যদি কিছু হয়ে যায়, সেটা তো চিন্তার বিষয়।’’ শুনে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেটা ওকে বল, আমার এমন মনে হচ্ছে, কী করব?’’ প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘বাপ্পাদাকে পার্সোনালি জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাপ্পাদা বলল, জানোয়ার হয়ে যায়নি এখনও।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তির নির্দেশ, ‘‘ওই মতো করেই কর।’’ দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘দাদু বলছে, নবান্নে মিটিং হয়নি। ওরা তো সল্টলেকে ফেরত চলে আসছে। ভাববে শাসকেরা মারটা মেরেছে।’’ তার পরই দ্বিতীয় ব্যক্তি, প্রথম ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘‘কী বলল কথাটা বুঝেছ? বলছে, পুরো দোষটা দিয়ে আরও অশান্তিটা পাকানো যাবে। তবে কলকাতার কাউকে দিয়ে নয়। বাইরের লোক।’’ সব শুনে প্রথম ব্যক্তি বলেন, ‘‘ঠিক আছে দেখছি। কী করব? মাথা ফাটানোটা কি ঠিক হবে?’’ শেষে দ্বিতীয় ব্যক্তি বলেন, ‘‘দেখ, খানিকটা যদি কিছু করা যায়।’’
শনিবার সকালে কলতানের গ্রেফতারির পর সুজন চক্রবর্তী অবশ্য দাবি করছেন, এটি সাজানো। কাউকে বদনাম করে আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যেই এই অডিয়োটি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে বলে দাবি বাম নেতার। বাম যুব নেতার গ্রেফতারি কিসের ভিত্তিতে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও। তাঁর মতে, বামেরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে অতিপ্রাসঙ্গিক হওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেফতার করা হল? ওই অডিয়ো ক্লিপ কী ভাবে কুণালের কাছে গেল, তা নিয়েও প্রশ্ন বিজেপি নেতার।