জ়িনতের বর্তমান অবস্থান। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
রাতভর পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড় এবং সংলগ্ন কুইলাপালের জঙ্গলেই রইল বাঘিনি জ়িনত। সোমবার সকালে জিপিএস-এর মাধ্যমে বন দফতরের আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন, রবিবারের পর আর অবস্থান পাল্টায়নি সে। ইতিমধ্যেই ওই পাহাড় লাগোয়া অঞ্চলে উপস্থিত হয়েছেন বন দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা।
বাঘিনিকে ধরতে চেষ্টার অবশ্য কোনও ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই সমতল এলাকায় ছাগলের টোপ দিয়ে একটি খাঁচা পাতা হয়েছে। আরও দু’টি খাঁচা বসানো হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। বন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, জঙ্গল বা পাহাড় থেকে খোলা জায়গায় এলেই জ়িনতকে ধরার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার বিভাগীয় বন আধিকারিক (ডিএফও) অঞ্জন গুহ বলেন, “ওই বাঘিনিকে সুস্থ ভাবে সিমলিপালের জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। রাইকা পাহাড়ে রয়েছে বাঘিনি।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘শ্যাডো জ়োন’ হওয়ার কারণে কিছু সময়ের জন্য বাঘিনির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তবে অত্যাধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেই জ়িনতের গতিবিধির উপরে নজর রাখছেন বন দফতরের আধিকারিকেরা।
গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাড়োবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের জ়িনতকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে (টাইগার রিজ়ার্ভ, সংক্ষেপে এসটিআর) আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে রেডিয়ো কলার পরিয়ে ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। বন দফতর সূত্রে খবর, সেখান থেকেই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাঁটা দেয় জ়িনত। সিমলিপাল থেকে গুরবান্দা হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিল সে। সেখানে জামশেদপুর বন বিভাগের চাকুলিয়া রেঞ্জের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল তাকে। এর পর চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবান্ধি এলাকা থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত কটুচুয়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জ়িনত। তার পর সেখান থেকে পুরুলিয়া।
বন দফতর সূত্রে খবর, তারা জ়িনতকে লাগাতার অনুসরণ করেই চলেছে। বাঘিনির পিছু পিছু তারাও পুরুলিয়ার জঙ্গলে এসে পৌঁছেছে। বাঘিনিকে ধরতে রবিবার সকাল থেকেই নানা রকম চেষ্টা চালাচ্ছে তারা। শুধু এ রাজ্যের বন দফতরই নয়, জ়িনতকে ধরতে হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছেন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীরা। সব মিলিয়ে মোট ছ’টি রেডিয়ো কলার ট্র্যাকিং অ্যান্টেনা ব্যবহার করে খোঁজা হচ্ছে বাঘিনিকে।