সরশুনার ট্যাব সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে শিলিগুড়ি থেকে তিন জন গ্রেফতার। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
ট্যাব-কাণ্ডে আরও তিন জনকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রাথমিক স্কুলের এক শিক্ষকও। ট্যাব নিয়ে সরশুনা থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার শিলিগুড়ি থেকে তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত শিক্ষক ট্যাব-কাণ্ডের অন্যতম মূলচক্রীও, দাবি পুলিশের। এই নিয়ে ট্যাব-কাণ্ডে মোট ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ২১। ধৃত শিক্ষক উত্তর দিনাজপুরের মরিচা গোলাগাছ স্কুলে কর্মরত।
সরশুনার একটি স্কুলে ৩১ জন পড়ুয়া ট্যাবের টাকা পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যের আরও নানা প্রান্তের স্কুল থেকেই এমন অভিযোগ এসেছে। কলকাতা এবং মালদহ পুলিশ বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তদন্তে নেমেছে। পৃথক তদন্ত করছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডিও। সরশুনার অভিযোগের তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশ প্রথম থেকেই দাবি করছিল, এই চক্রের মাথা রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায়। আগেও দু’জনকে চোপড়া থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। রবিবার সেই তালিকায় যুক্ত হল আরও তিন জনের নাম।
ধৃতেরা হলেন চোপড়ার বাসিন্দা দিবাকর দাস, দার্জিলিঙের বাসিন্দা গোপাল রায় এবং বিশাল ঢালি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের একটি দল ১৬ নভেম্বর বিহারের কিষাণগঞ্জে পৌঁছয়। সেখান থেকে ১৭ নভেম্বর তারা যায় শিলিগুড়িতে। দার্জিলিঙের সেবক রোডের কসমস শপিং মলের সামনে থেকে এই তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার তাঁদের আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজত চাওয়া হবে।
ট্যাব-কাণ্ডে রবিবারই আরও পাঁচ জনকে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কলকাতা পুলিশ এলাকায় এই নিয়ে ১০টি মামলা দায়ের হয়েছে। শহরের মোট ১০৭ জন পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা অন্যত্র চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সরশুনা ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে যাদবপুর, মানিকতলা, ওয়াটগঞ্জ, কসবা, জোড়াবাগান, ভবানীপুর, গল্ফগ্রিন এবং বেনিয়াপুকুরের স্কুলের পড়ুয়ারা।
রাজ্য সরকারি স্কুলগুলির একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার জন্য সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প চালু করেছিল। এই প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সেই টাকা ঢুকে যায়। স্কুলের মাধ্যমেই করা হয় আবেদন। কিন্তু অভিযোগ, এ বছর রাজ্যের অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি। বরং তা চলে গিয়েছে অন্য কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে এটিএম থেকে সেই টাকা তুলেও নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেই তদন্তে নেমে এখনও পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে কৃষক, সকলেই রয়েছেন। তদন্তকারীদের মতে, মূলত বিভিন্ন সাইবার ক্যাফে থেকে স্কুলের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর বদলে দেওয়া হয়েছে। যারা ট্যাবের টাকা পায়নি, তাদের ট্যাব কেনার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।