৫০ বছর ধরে অকেজো আইন বাতিল হওয়ার পথে। ফাইল চিত্র
বছরের পর বছর বেঁচে রয়েছে আইন। কিন্তু তার কোনও ভূমিকাই নেই। এ বার সেই আইনের বিলোপ চাইছে রাজ্য সরকার। খুব তাড়াতাড়ি বিধানসভায় বিল এনে আইনটির ‘পরমগতি’ ঘটাতে চায় নবান্ন।
নাম ‘বেঙ্গল রাইনো কনজারভেশন অ্য়াক্ট ১৯৩২’। সেই কবে ব্রিটিশ জমানায় চালু হয়েছিল। কিন্তু সেই আইন হয়ে গিয়েছে গন্ডারের চামড়ার মতো। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমরা অনেক সময় অসাড় কোনও কিছুকে গন্ডারের চামড়ার সঙ্গে তুলনা করি। এই আইনটাও এখন তেমনই অবস্থায়। কোনও কাজেই লাগে না। বাংলায় কেন্দ্রীয় আইনেই বন্যপ্রাণ সংরক্ষিত হয়। তাই শুধু শুধু ওই আইনকে বাঁচিয়ে রাখার কোনও মানেই হয় না। তাই তা বাতিলের কথা ভাবা হচ্ছে।’’ আইন বাতিলের মূল উদ্যোগ বন দফতরের। ইতিমধ্যেই আইন দফতর হয়ে পরিষদীয় দফতরের কাছে গিয়েছে। নিয়ম মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে তারাই।
স্বাধীনতার আগে অবিভক্ত বাংলায় গন্ডার সংরক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৩২ সালে একটি বিল বিধানসভায় পাশ করানো হয়েছিল। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৩২ সালে তৈরি হওয়া ওই আইনের গুরুত্ব চলে যায় ১৯৭২ সালেই। সেই সময়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। তাঁর জমানাতেই কেন্দ্রীয় সরকার বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে একটি আইন পাশ করে। নতুন আইনে সমস্ত রকম বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের কথা বলা হয়। দেশের সর্বত্র একই নীতি নেওয়ার জন্য শক্তিশালী আইনও তৈরি করে কেন্দ্র। এর পরে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ব্রিটিশ আমলের আইনের আর কোনও গুরুত্ব ছিলই না। বাংলার পৃথক গন্ডার সংরক্ষণ আইন অকেজো হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি বন দফতর এই আইনটি তুলে দেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী হয়। জানা গিয়েছে, বিধানসভায় বাতিলের বিল আনবে পরিষদীয় দফতর। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য বিধানসভার স্বল্পকালীন অধিবেশন। চলবে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সেই অধিবেশনেই ব্রিটিশ আমলের আইনটি বাতিল হতে পারে। যা দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে অকেজো।
বিধানসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, অপ্রয়োজনীয় আইন রেখে রাজ্য সরকারের কোনও লাভ নেই। কারণ, কেন্দ্রের তৈরি করা আইনই রাজ্যে সঠিক ভাবে কার্যকর হচ্ছে। তাই এই আইনটিকে বিধানসভার অধিবেশনে বিল আকারে এনে তা বাতিল করা হচ্ছে।
ভারতে ব্রিটিশ আমলের আইন বাতিলের এমন উদ্যোগ অবশ্য নতুন কিছু নয়। এই রাজ্যে তো বটেই দেশেও অনেক পুরনো আইন বাতিল হয়েছে আগে। কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী জমানাতেও অনেক পুরনো আইন বাতিল হয়েছে। গত কয়েক বছরে উত্তরপ্রদেশ সরকার কয়েকশো পুরনো ও অকেজো আইন বাতিল করেছে। আরও কিছু আইন বাতিল হওয়ার পথে রয়েছে বলেও জানিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার।