PM Jan Vikas Karyakram

কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধের ভয়ে ‘জিয়ো ট্যাগ’

প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই প্রকল্পটি আগে পরিচিত ছিল ‘মাল্টি সেক্টোরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এমএসডিপি) নামে। পরিধি বাড়িয়ে এখন প্রকল্পটি চলছে প্রধানমন্ত্রী জন বিকাশ কার্যক্রম (পিএমজেভিকে) নামে।

Advertisement
চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৫২
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

সংখ্যালঘু এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অবাধ রাখতে দ্রুত পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, আবাস বা একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের বরাদ্দ ঘিরে যে জট অব্যাহত, তার ছায়া এ বার এই প্রকল্পেরও পড়তে পারে। তাই ওই প্রকল্পে এত দিন পর্যন্ত পরিকাঠামো তৈরির যা কাজ হয়েছে, তাতে যত দ্রুত সম্ভব ‘জিয়ো-ট্যাগ’ করার নির্দেশ প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে দিয়েছে নবান্ন। সেই কাজ না হলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়ার রাস্তা ফের বন্ধ হতে পারে।

Advertisement

প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই প্রকল্পটি আগে পরিচিত ছিল ‘মাল্টি সেক্টোরাল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম’ (এমএসডিপি) নামে। পরিধি বাড়িয়ে এখন প্রকল্পটি চলছে প্রধানমন্ত্রী জন বিকাশ কার্যক্রম (পিএমজেভিকে) নামে। তাতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ব্লক, শহর, গ্রামে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুল ভবন, আইটিআই, ছাত্রাবাস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পানীয় জল, সড়ক বা কর্মসংস্থানমুখী কোনও প্রকল্প তৈরি করা যায়। মোট বরাদ্দের ৬০% দেয় কেন্দ্র। বাকি ৪০ ভাগ রাজ্যের দায়িত্বে। বছর খানেক ধরে কেন্দ্রের বরাদ্দ নিয়ে জট তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।

এ নিয়ে নবান্নের তরফে স্পষ্ট কোনও বার্তা পাওয়া না গেলেও প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদানভুক্ত পরিকাঠামো বা প্রকল্পে জিয়ো-ট্যাগ বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ, সরকারি অর্থে পরিকাঠামো তৈরি হলে অক্ষাংশ-দ্রাঘিমাংশ নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্টের প্রমাণ আপলোড করতে হয় সরকারেরই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে। রাজ্যে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে সেই কাজ অনেকটা বাকি ছিল। ফলে কেন্দ্রের বরাদ্দ পেতে সমস্যা হচ্ছিল। বেশ কিছু দিন আগে প্রত্যেক জেলাশাসককে নবান্ন জানিয়েছে, যে সব এলাকায় এই প্রকল্পের কাজ হয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব সেই কাজের জিয়ো-ট্যাগ করে তা কেন্দ্রের পোর্টালে আপলোড করতেই হবে। এক জেলা-কর্তার কথায়, “বছরখানেক ধরে এই প্রকল্পে বরাদ্দ অনিয়মিত হয়েছে। তার পরেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের এই নির্দেশে বোঝা যাচ্ছে, জিয়ো-ট্যাগের কাজ সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রের ভাগের টাকা পাওয়া মুশকিল। আবাস বা একশো দিনের কাজের পরিণতি দেখে এ বার সরকার আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না।” সরকারের এক শীর্ষকর্তার কথায়, “প্রকল্পের যাবতীয় শর্ত মানা হচ্ছে। জিয়ো-ট্যাগের কাজও চলছে দ্রুত। নজরও রাখা হচ্ছে।”

কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে এক লক্ষ ১৬ হাজার ৫৪৯টি প্রকল্প এবং সম্পত্তির (গোটা দেশের মধ্যে সর্বাধিক) জিয়ো-ট্যাগ করার কথা ছিল। তত দিন পর্যন্ত জিয়ো-ট্যাগ হয়েছিল মাত্র ৯৮৪২টিতে। চলতি বছরের মাঝামাঝি নাগাদ এই কাজে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দেয় নবান্ন। কেন্দ্রের তথ্য জানাচ্ছে, পিএমজেভিকে-র অধীনে ২০১৪-১৫ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ পর্যন্ত এ রাজ্যকে প্রায় ১৭৬৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আবার এই প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে গত বছরের জুলাই পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গেই সবচেয়ে বেশি (৫১০৮টি) পরিকাঠামো তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার জন্য প্রায় ১৯৩ কোটি টাকা অনুমোদনও করা হয়।

পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের বরাদ্দ না পাওয়ায় জব-কার্ড থাকা উপভোক্তাদের নিজস্ব অর্থেই কাজ দেওয়ার দাবি করছে রাজ্য। আবার আবাসেও কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় সেই প্রকল্পও নিজেদের অর্থে করার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এগুলি রাজ্যের উপরে বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি করছে। তার পরে সংখ্যালঘু এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো প্রকল্পেও বরাদ্দ বন্ধ হলে রাজ্যের আর্থিক সমস্যা আরও বাড়বে। তাই পরিস্থিতি আর হালকা ভাবে নিতে চাইছে না নবান্ন।

আরও পড়ুন
Advertisement